জামাই জব্দ - অধরা জেরিন | Jamai Jobdo - Odhora Jarin - Part-1

জামাই-জব্দ
পর্ব - ১
লেখা: অধরা জেরিন

আমাকে আপনার যখন ভালো লাগেনি বিয়ে করেছিলেন কেন?
- বাবা মায়ের কথা রাখতে।
-আপনি একটা সেলফিস ত্যাদর ছেলে।
-বুঝতেই যখন পারছো এখন এই ঘর থেকে বিদায় হও।
-এটা তো বাসর ঘর। আমি নতুন বউ কোথায় যাবো?
-আমার বাবা মা তোমাকে পছন্দ করে এনেছে তাদের সাথে গিয়ে গল্প করো।
- বিয়ের আগে তাদের বলতে পারতেন?
-এই মেয়ে শোন এতো জেরা করবে না।খাট থেকে নামো বলছি।
-আমি যাবো না আপনি যান।
-কি সাহস রে বাবা। আমার ঘর থেকে আমাকে যেতে বলে। নামবে নাকি কান ধরে টেনে নামাবো?
-আপনি আমার গায়ে হাত দিলেই চিৎকার করবো। ধরুন একবার ধরে দেখুন।
- ভিষণ বিচ্ছু তো। ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।
এই বলে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালাম।
কিছু দিন আগের কথা। আমার কাছে বিয়ে মানেই একটা প্যারা ছিল। নিজের কষ্ট করে কামাই করা টাকা একটা মেয়ের পিছনে ঢালো।তারপর আবার এটা করো ওটা করো।শপিং করাও ঘুরতে নাও। দিনের মধ্যে অজস্রবার দাঁত কেলিয়ে আই লাভ ইউ বলো।এ সব আমার দারা সম্ভব না।তাই ঠিক করেছিলাম কোনো বিয়ে করবো না।
,
এলাকায় কিছু বন্ধুদের যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে একটা ক্লাব খুললাম।নাম দিলাম চিরকুমার ক্লাব। আমি ছিলাম প্রেসিডেন্ট।সব বন্ধু জি এফ ছেড়ে ওখানে জয়েন করতে লাগলো। বেশ কিছু দিনেই সদস্য বেড়ে গেলো। যে সব ছেলে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে ছিল তারা ও যোগ দিলো।
,
বেশ ভালোই চলছিল সব কিছু। বাবার বিজনেস দেখাশোনার পাশাপাশি ক্লাব এ কাজ করতে লাগলাম।
সে দিন টা ছিল আমার জন্য খুব ভয়াবহ। আমি ঠান্ডা একদম লাগাতে পারি না। ক্লাব থেকে বেশ রাত করে বাসায় যাচ্ছি ঠিক এমন সময় হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলো। কপাল খারাপ কোনো সি এন জি নেই রাস্তায়। বাধ্য হয়ে ভিজে ভিজে বাসায় গেলাম। পরদিন থেকেই শুরু হলো সর্দি কাশি মাথা ব্যথা। এতোটাই মাথা ব্যথা বিছানা থেকে মাথা তুলতে পারলাম না। কোনো হুশ নেই। ঠিক পাঁচ দিন পর সুস্থ হলাম একটু। যখন বেহুঁশের মতো পরে ছিলাম বাবা মা রাত জেগে পাশে বসে থাকতো। আমাকে এটা ওটা বলতো আমি শুধু মাথা নেড়ে ইশারা করতাম।
,
আরো দু দিন পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে সকালের দিকে ক্লাব এ গেলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে অবাক। ইয়া বড়ো একটা তালা ঝুলছে। আমার বন্ধু রিয়াদ কে ফোন করলাম বললাম,
- কি রে দোস্ত তোরা কই?
-আমি বাসায় তুই কই?
-এই তো ক্লাব এ এলাম। তুই তাড়াতাড়ি আয় দরজায় তালা কেন?
- তালা কেন মানে? তোর বাবাইতো সে দিন এসে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বললো ক্লাব বন্ধ ,তুই নাকি বিয়েতে রাজি হয়েছিস?
-বিয়ে মানে কার বিয়ে? সকাল সকাল কি তোকে পাগলে কামড়িয়েছে?
-তোর বিয়ে আবার কার। মেয়ে ও ঠিক তোর নাকি পছন্দ হয়েছে?
-তুই কি এবার সত্যি পাগল হলি হা হা আমার বিয়ে। মজা করিস না তাড়াতাড়ি চলে আয় অনেক দিন আড্ডা দেওয়া হয়না।
-পাগল আমি না তুই। তুই আংকেল কে গিয়ে জিজ্ঞেস কর কার বিয়ে।
-ধেত তুই কিন্তু ফাজলামো বেশি করছিস।
-অনেক কষ্ট করে একটা মেয়ে পটিয়ে ছিলাম। তোর বুদ্ধিতে সেটা ও গেলো। এখন কাল একটাকে পটিয়েছি। প্লিজ আমায় মাফ কর। বিয়ের দাওয়াত দিস এসে খেয়ে যাবো।
,
এই বলেই লাইন কেটে দিলো।মেজাজ পুরোপুরি গরম হয়ে গেলো। বাসায় চলে গেলাম। যেয়ে দেখলাম মা রান্না করছে। কাছে গিয়ে বললাম,
--এ সব কি হচ্ছে মা?
-কেন বাবা তোর পছন্দের নাড়ু বানাচ্ছি।
-রাখো তোমার নাড়ু।বাবা কোথায়?
-তোর বাবা হাটে গেছে গরু কিন্তু। সাথে তোর ছোট মামা।
-গরু! গরু দিয়ে কি হবে?
-শোন বোকা ছেলের কথা। বিয়েতে লাগবে না গরু?
-কার বিয়ে? কি হচ্ছে এ সব?বাবা ক্লাব কেন বন্ধ করলো?
-অয়ন, আমাকে কাজ করতে দে। তোর বাবাকে জিজ্ঞেস করিস।
,
এই বলেই মা চলে গেলো।
আমি বুঝতে পারছি নিশ্চয়ই কোনো গোলমাল হচ্ছে। আমাকে ফাঁসাচ্ছে নাতো?
বাবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
,
রাতে খাবার টেবিলে বসে আছি। ছোট মামা আর বাবা নিজেদের মতো খেয়ে যাচ্ছে আর এটা ওটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। আমি যে সামনে বসে আছি কোনো গুরুত্ব নেই। বাবাকে ছোট বেলা থেকেই ভিষণ ভয় পাই। তাই মনে মনে কথা গুছিয়ে বললাম,
--বাবা তুমি ক্লাব এ গিয়েছিলে?
বাবা না শোনার ভান করে মাকে বললো,
--কই গো মাছের ঝোলটা যা হয়েছে না।আরেক টুকরো দাও দেখি।
,
মনে মনে রাগ হচ্ছে খুব। কেউ মুখ খুলছে না।আবার বললাম,
--শুনলাম বাড়িতে বিয়ে ,গরু কিনতে গিয়েছিলে?
--হ্যা ঠিক শুনেছো।
--কিন্তু আমার ক্লাবে তালা কেন?
--তোমার বিয়ে। বিয়ের পরতো আর চিরকুমার থাকবে না তাই তালা দিয়েছি।
,
এই বলেই উঠে চলে গেলো। মামাকে বললাম,
--ছোট মামা শুনলে বাবার কথা? আমার কোনো মত নেই?
মামা খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে ধুতে বললো,
--সে দিন রাতেই তো তুই বলে দিলি বিয়েতে রাজি। এমনকি মেয়ের ছবি ও তোর পছন্দ হয়েছে।
-তোমরা সবাই মিলে আমার সাথে ষড়যন্ত্র করছো। আমি অসুস্থ ছিলাম। কোনো হুশ ছিলো না। কি তোমরা বলেছো আমি বলেছি জানি না।তাই বলে নিজের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে। এটা হতে পারে না।
-শোন বাবা পাগলামি করিস না।বাবা মায়ের কথা মেনে নে। মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর তোর সাথে মানাবে অনেক।
-রাখো তোমাদের মেয়ে। আমি কাল বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি দেখি কি করো?
-সেটা হবে না।তোমার বাবা সে সব আগের থাকে ঠিক ঠাক করে রেখেছে। আর আমি এসেছি কেন জানো? তুমি বিয়েতে রাজি না হলে তোমার মা মানে আমার বুবু তাকে চিরদিনের জন্য নিয়ে যেতে। এটাই তোমার বাবার আদেশ।
-ছি আমার ভাবতে ও লজ্জা করছে বাবা এই বয়সে এসে কি শুরু করেছে।
-তোমার মতো ছেলে যে মায়ের আছে তার এমন হওয়া স্বাভাবিক।
,
এই বলেই মামা চলে গেলো। নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। এটা কোন ধরনের অত্যাচার মেনে নেওয়া যায়।
আমি বিয়ে না করলে কার কি সমস্যা বুঝতে পারছি না। একটু পর মা এসে ইমোশনাল নাটক করতে লাগলো বললো,
,
-সব শুনলি তো বাবা।এই শেষ বয়সে এসে স্বামীর ঘর ছাড়তে হবে। তুই না করিস না। রাজি হয়ে যা।খুব ভালো মেয়ে আমাদের অনেক পছন্দ। তুই সুখী হবি।
এই বলেই আঁচলে চোখ মুছতে লাগলো। আমি বললাম,
-তোমার নাটক থামাও তো মা। এই বলে দিলাম বিয়ে করছি ভালো কথা কিন্তু আমি আমার ইচ্ছে মতো চলবো। কোনো বাধা আসলে তখন দু চোখ যেখানে যায় চলে যাবে।
,
মা সাথে সাথে হেসে দিয়ে বললো,
-ঠিক আছে বাবা তাই হবে। যাই তোর বাবাকে খবর টা দিয়ে আসি।
,
,
হঠাৎ করে চিৎকার কানে এলো। বাস্তবে ফিরে এলাম। চিৎকার টা আমার ঘর থেকে এলো। মেয়েটার আবার কি হলো। তাড়াতাড়ি করে রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি সে নেই। দরজা বন্ধ কিন্তু কোথাও নেই। গেলো কোথায়? ওয়াশরুম ও ফাঁকা। পড়লাম মহা বিপদে। আপদটা কোথায় গেলো আবার। একটু পর আমাকে অবাক করে দিয়ে খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা কি মেন্টাল?খাটের নিচে কি?
,
সে খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,
-আমার হাতে এটা কি চিনেন?
-একি এটা কি?
-হি হি আরশোলা। আপনার জন্য ধরে আনলাম খুব কষ্ট করে খাটের নিচ থেকে।
-এই মেয়ে তুমি কি পাগল। ওটা ফেলো তাড়াতাড়ি।
-হুম ফেলবো তবে আপনার গায়ে। যদি আমার সাথে সারা রাত গল্প না করেন। চলুন খাটের উপরে উঠে বসুন।
-বসবো না।
-ঠিক আছে দিলাম গায়ে।
,
এই বলেই সত্যি আমার গায়ে ওটা ছেড়ে দিলো।
আমি বললাম,,,,,

পর্ব - ২