জামাই জব্দ - অধরা জেরিন - পর্ব তিন | Real Love Story | Romantic Love Story

Real Love Story, Romantic Love Story, real love story, short story, romantic love story, romantic story, short love story, children stories, love story book, true love story,

জামাই-জব্দ
পর্ব তিন
লেখা অধরা জেরিন


বাসায় কলিং বেল বাজাতেই অথৈ আমার সামনে এসে দরজা খুলে দিলো। গায়ে দেওয়া আমার পছন্দের টি- শার্ট। মেজাজ গরম তেলে ভাজা মাছের মতো হয়ে গেলো। ওর হাত ধরে টানতে টানতে রুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বললাম,,

-- এই মেয়ে তুমি আমার টি -শার্ট গায়ে দিয়েছো কোন সাহসে? ছি তুমি না নতুন বউ এই গুলো পরা দেখলে মানুষ কি বলবে?
-- আমার কি দোষ। টি -শার্ট পছন্দ হয়েছি পরেছি।
-- তুমি একটা আস্তো পাগল। মা কোথায় মা!!
-- মাকে ডেকে লাভ নেই।
--কেন কোথায় গেছে?
--পাশের বাসায়।

আমি অথৈর সামনের থেকে এসে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। সারা দিন পই পই করে ঘুরেছি। এখন শাওয়ার নিয়ে খেয়ে দেয়ে একটা লম্বা ঘুম দিতে হবে। কিন্তু তার আগে এই মেয়েটার কি করা যায়। ও একদিনে আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মাকে বলে একটা কিছু করতে হবে। এই মেয়ে নিয়ে আমার চলা সম্ভব না। এতো টুকু বুদ্ধি যদি মাথায় থাকে।

গোসল সেরে বাইরে এসে দেখি সে শাড়ি পরছে আয়নার সামনে দাড়িয়ে। মেয়েরা পারে ও বটে ঘন্টায় ঘন্টায় আয়নার সামনে দাড়াতে। আমি চুল ঠিক করছি এমন সময় আমার গায়ে একটা চিমটি কেটে বললো,,

--এই শোন না,,

হঠাৎ করে এমন চিমটিতে খুব ব্যথা পেলাম। হায়রে কপাল খারাপ এমন বউ কারো হয় কিনা জানা নেই।
চিমটি দেওয়া জায়গা ডলতে ডলতে বললাম,,
--ইচ্ছে করছে তোমার কান টেনে লম্বা করে দিতে। এভাবে কেউ চিমটি কাটে।
--রাগ করো কেন জান।
--শোন,, এই জান টান আমাকে বলবে না।
--তাহলে কি বলে ডাকবো অয়ন?
-- ধেত,! বলো কি হয়েছে?
--শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করে দাওনা। কেন ছিনেমায় দেখোনা নায়িকাকে শাড়ি পরিয়ে দেয় নায়ক কতো সুন্দর করে।
-- তুমি নায়িকা না বুঝলে একটা শাক চুন্নি। আমার ঘাড়ে এসে বসেছো৷ আমাকে মেরে ফেলতে।
--ছি জান এভাবে বলতে পারলে। তুমি যদি কুচি ঠিক না করো তাহলে তোমার ওই কালো পাঞ্জাবীটা গায়ে দিবো কিন্তু।

অথৈর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। কি বলে মেয়েটা। সত্যি সত্যি কি ও একটা তার ছেড়ে মেয়ে। নাকি ইচ্ছে করে আমাকে জব্দ করছে। আচ্ছা এতে আবার বাবা মায়ের হাত নেই তো? সবাই মিলে কি আমার সাথে এমন করছে?

--কি হলো দাও ঠিক করে।

ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম। একটা হলুদ শাড়ি গায়ে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। এবার ওর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। নাহ মেয়েটা দেখতে খারাপ না। শাড়ির সাথে গায়ের রং টাও কাঁচা হলুদের মতো সুন্দর।

আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললো,,

-- কি দেখছো ওমন করে? প্রেম এ পরেছো?লাভ নেই যদি আমাকে পটাতে পারো তাহলে ভেবে দেখবো। হা হা হা৷

ওর কথা শুনে শরীর জ্বলে উঠলো। আমার বয়েই গেছে ওর প্রেমে পরতে।
আবার বললো,,

--কি হলো দাও ঠিক করে। কতো সময় এভাবে দাড়িয়ে থাকবো।

একান্ত বাধ্য হয়ে ওর কথা মেনে নিলাম। জীবনে কখনও এমন পরিস্থিতিতে পরিনি। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।

যাইহোক শাড়িটা পরা শেষ হলো। আমি খেয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পরলাম। কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।
যখন ঘুম ভাঙলো দেখি অনেক রাত। অথৈ আমার পাশে ছোট্ট বাচ্চাদের মতো জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওর দিকে ভালো করে তাকালাম। ঘুমের ভিতরে কাউকে এতো সুন্দর লাগে এই প্রথম বুঝতে পারলাম।

সকালে ঘুম ভাঙলো অথৈর চিৎকারে। আমি ধড়ফড় করে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। কি হলো আবার?
ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও সোফায় বসে বসে কাঁদছে।

ওর কান্না দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কাছে গিয়ে বললাম,,

--কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন?
-- আমার মন খারাপ তাই কাঁদছি।
--মন খারাপ সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু কাঁদছো কেন?
--আমি এ বাড়িতে আসার পর থেকে টমি কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
--টমি কে?
--আমার পোষা বিড়াল। অনেক ভালোবাসতাম ওকে।

ওর কথা শুনে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারলাম না। এতো টুকু বুঝতে পারলাম আমার জীবনের শনী শুরু হয়ে গেছে।

ও হঠাৎ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
--তুমি আজ আমার জন্য একটা বিড়ালের বাচ্চা এনে দিবা।

ওর কথা শুনে হা হয়ে গেলাম। আমি কোথায় পাবো বিড়ালের বাচ্চা।
ওকে বললাম,,
--দেখো আমি পারবো না। বাচ্চাদের মতো করবে না।
-- ঠিক আছে আমি নিজেই খুঁজে আনবো।

এই বলেই উঠে চলে গেলো। মনে মনে বললাম যা খুশি করুক আমার কি।

সকালে খেতে বসে বাবা বললো,,

-- শোন, আজ থেকে তুই আমার অফিসে গিয়ে বসবি।

বাবার কথা শুনে চুপ করে গেলাম।
বাবা চলে যেতেই মাকে বললাম,,

-- মা তুমি বাবা কে বলো আমি আপাতত অফিসে বসবো না। দু দিনের জন্য একটু বাইরে যেতে হবে কাজ আছে।
আমি কথা শুনে মা বললো,,
-- সে কি কথা অয়ন। ঘরে নতুন বউ তুই বাইরে যাবি? তাহলে অথৈ কে ও নিয়ে যা। কিছু দিন দু জন এক সাথে ঘুরে আয়।
--না আমি একাই যাবো। জরুরি কাজ মা। একাই যেতে হবে।

এই বলে উঠে চলে এলাম। যাক বাবা বাঁচা গেলো। কিছু দিন এই প্যারা থেকে বাঁচতে পারবো।

ঘরে এসে দেখি অথৈ একটা বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে বসে আছে। অবাক হয়ে গেলাম। কোথায় পেলো এটা?

আমাকে দেখে হেসে দিয়ে বললো,,,

--বাচ্চাটা সুন্দর না অনেক?
--কোথায় পেলে এটা?
--বাবা ধরে এনে দিলো।
--বাবা?? বাবা কোথায় পেলো এটা?
--পাশের বাসার আংকেলের। উনাকে গিয়ে বলতেই দিয়ে দিলো। জানো এটার নাম আমি আর বাবা দুজন মিলে ঠিক করেছি।

বাবা ও পাগল হয়ে গেছে এই মেয়ের পাল্লায় পরে।
কি বলবো বুঝতে পারছি না। অথৈ আবার বললো,,
--এটার নাম ঝিলমিল। অনেক সুন্দর না নামটা?
--হ্যা অনেক সুন্দর।

আমার কথা শুনে ওটা নিয়ে চলে গেলো।
নাহ আজই আমি চলে যাবো। না হলে এদের সাথে আমি ও পাগল হয়ে যাবো।
বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে কক্সবাজারের একটা টিকিট কিনলাম। আমার একটা বন্ধু ও খানে থাকে।
ওর কাছে গিয়ে কয়েক দিন কাটানো যাবে।

বাসায় এসে কাপড়চোপড় গোছালাম। ঠিক করলাম বাসে উঠে মাকে ফোন করে জানিয়ে দিবো।
অথৈকে কোথাও দেখতে পেলাম না। মনে মনে খুশি হলাম। সামনে পরলে হাজার টা উওর দিতে হবে।

সি এন জি নিয়ে বাস কাউন্টারে চলে এলাম। অনেক ভালো লাগছে নিজের কাছে। পাগলের আড্ডা খানা থেকে বের হতে পেরেছি।

ছিটে উঠে বসবো এমন সময় দেখতে পেলাম আমার পাশের ছিটে অথৈ বসে আছে বিড়ালের বাচ্চা টা কোলে নিয়ে। আমি হা করে আছি। ভুল কিছু দেখছি নাতো?

আমাকে দেখে হেসে দিয়ে অথৈ বললো,,
--বাবু আসার আগে ঝিলমিলের জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসো।

ওর কথা শুনে বড়ো আকারে শক খেলাম।
এর মধ্যে মায়ের ফোন। রিসিভ করতে মা বললো,,,

পর্ব চার

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url