জামাই-জব্দ
পর্ব দুই
লেখা অধরা জেরিন
--এই মেয়ে তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে? বাবা জেনে শুনে আমার সাথে এমন করলো। আরশোলা কেউ গায়ে মারে?
--আপনার মতো সেলফিস ছেলেদের এটাই উচিত।
--সকালে যদি এই বাড়িতে তোমাকে দেখি তোমাকে মেরে ভর্তা বানাবো।
--আর এখন যদি আপনি আমার সাথে এমন করে কথা বলেন আমি কি করবো জানেন?
--কি করবে শুনি?
-- ঠান্ডা পানি গায়ে ঢালবো।হি হি হি
--ছি, তুমি মেয়ে না একটা শাক চুন্নি।
--দেখুন আমার একটা নাম আছে। এ সব শাক চুন্নি আবার কি? আপনি তখন থেকে যা ইচ্ছে বলছেন।
আমি ঘুমাবো আপনি সরুন।
--সরুন মানে, এটা আমার ঘর। তুমি গিয়ে বারান্দায় শোবে।এই ঘরেই এলাও না।
আমি অথৈ। এতো সময় ধরে আপনারা আমার আর আমার সেলফিস বরের কাহিনী শুনছেন। ছোট বেলা থেকে আমি ভিষণ দুষ্টু। ঝগড়া , খোঁচাখুঁচি , এ গুলো আমার ভিষণ পছন্দ। কলেজের মেয়েরা আমাকে সব সময় একটু ভয় করে চলতো।মনে মনে বেশ মজাই পেতাম। নিজেকে একটু অন্য রকম লাগতো। বেশি এ সব দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে পরীক্ষায় যা হবার হলো।
তাই বাবা বেশি দেরি না করে ছেলে ঠিক করে ফেললেন। অবশ্য আমি ও হাঁপিয়ে উঠেছিলাম লেখা পড়া করতে করতে।
বিয়ের আগেই বান্ধবীদের বলতাম আমার সাথে যার বিয়ে হবে তাকে আমি অনেক ভালোবাসবো। কিন্তু আমার বর একটা গোবর গণেশ। একে মানুষ করতে আমার খবর আছে।
হঠাৎ করে আমার বর আবার আমাকে বললো,
--এই যে ম্যাডাম চুপ কেন? শুনতে পাননি কি বললাম?
--আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনার কথা শুনবো। কিন্তু আজ রাত টা শুধু আমি এ ঘরে থাকি। আমি তো এ বাড়িতে নতুন। আপনি বরং ওই বারান্দায় গিয়ে ঘুমান।
আমার কথা শুনে অয়ন কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললো,
-- আজব একটা মেয়ে। ঠিক আছে এই খাট অর্ধেক তোমার অর্ধেক আমার। মাঝ খানে এই কোল বালিশ থাকবে। যদি ভুলে ও এদিকে আসো তোমাকে ঠেলে নিচে ফেলে দিবো।
অয়নের কথা শুনে বললাম,
--আর যদি তুমি আসো এদিকে তখন কি হবে?
আমার কথা শুনে অয়ন কিছু না বলে তাড়াতাড়ি অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পরলো।
মনে মনে ভিষণ হাসি পাচ্ছিল। সবে লাইনে আসতে শুরু করেছো।
সকালে অয়ন গভীর ঘুমে মগ্ন। অয়নের পাশে ওর ফোন খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছে। মনে হচ্ছে ওটা ওর বউ। আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো। ফোন টা লুকিয়ে রাখলাম। বাসর রাতে অনেক জ্বালিয়েছো। এবার মজা বুঝবে।
একটু পর শ্বাশুড়ি এলো। এসে বললো,
-- কি রে অয়ন এখনো ঘুমিয়ে আছিস? তোর বাবা নাস্তা করতে ডাকছে।
আমার বর বললো,
-- মা তুমি যাওতো আরেকটু ঘুমিয়ে নেই,।
-- আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।
তারপর আমাকে বললো,
--বউ মা তুমি চলো। ও একটু পর আসবে।
আমি শ্বাশুড়ির সাথে গিয়ে নাস্তা করে নিলাম। সব শেষে কফি খাবো তখন মনে পরলো আহারে আমার বর না খেয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে আছে। কফিটা ওকে দিলে খুব খুশি হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। রুমে গিয়ে দেখি এখনো ঘুমিয়ে আছে। কয়েকবার ডাকাডাকি করলাম কোনো কথা নেই।
ভিষণ রাগ হলো। একটা আঙুল নিয়ে কফিতে চুবিয়ে ধরলাম। আর হুড়মুড় করে উঠে বসলো।
চোখ লাল করে বললো,
-- তুমি কি মানুষ নাকি অন্য বস্তু?
--আমি তোমার বিয়ে করা বউ।
-- তুমি মেয়ে না হলে এতো সময়ে,,,,?
--কি করতে বলো?
-- হয় এই বাড়িতে তুমি থাকবে না হলে আমি।
-- তুমি যেখানে যাবে আমি ও সাথে যাবো। আমি তোমার বউ।
--এতো বউ বউ করবে নাতো। এক চড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো।
এই বলেই উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ওর কথা শুনে মনটা সত্যি এবার খারাপ হয়ে গেলো।
কেন করছে এমন। আমি তো মজা করে এমন করেছি।
হঠাৎ করে ওর ফোনের কথা মনে পরে গেলো।
ওটা আমার কাছে। এবার দেখি কি করো।
একটু পর বের হয়ে ফোন খুজতে লাগলো।আমি চুপ করে বসে আছি।
অনেক খোজার পর বললো,
--আমার ফোন কোথায়?
--বলবো না।
--আসলে এ জন্য বিয়ে আমার কাছে একটা পেইন।
--আমার কাছে ও।
--আমি জানি ফোন তুমি লুকিয়ে রেখেছো। আমি বাইরে যাবো। ফোন দাও।
--দিতে পারি একটা শর্তে?
অয়ন বসে পরে মাথায় হাত দিয়ে বললো,
--কি চাও তুমি?
--তোমার লক্ষী বউ হতে হি হি হি।
-- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা বলবে করবো। এখন আমার ফোন দাও।
--ঠিক আছে দিচ্ছি। কিন্তু আমার কথা না শুনলে আরো শাস্তি দেবো।
ফোন টা নিয়ে আমি বাইরে চলে এলাম। ভাগ্যিস পাস ওয়ার্ড জানে না। তাহলে ঘাটাঘাটি করে শেষ করে দিতো। মেয়েটা এরকম কেন? হয়তো বংশগত পাগল। কি ভাবে এর থেকে বাঁচবো?
বাইরে বের হবার সময় দেখি বাবা আর মা বসে বসে কি নিয়ে হাসাহাসি করছে। মেজাজ খারাপ হচ্ছিল খুব। আমার জীবন তেজপাতা করে দুজন বেশ মজায় আছে।
মা ডেকে বললো,
--কি রে কোথায় যাস? খেয়ে যা?
ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে বলি তোমাদের ওই সাধের বউকে খাওয়াও।
কিন্তু বাবার সামনে রাগ টা সামলে বললাম,
--বাইরে একটা জরুরী কাজ আছে।
বাবা বলে উঠলো,
--তোমার সাধের ক্লাব তো বন্ধ কোথায় যাও?
একবার বাবার দিকে তাকিয়ে বের হয়ে এলাম।
বের হতে দেখি দুই বন্ধু চায়ের দোকানে। ওদিকে খিদেয় পিটে চো-চো করছে। ওখানে গিয়ে বসে বললাম,,
--কি রে কেমন আছিস তোরা?
এক বন্ধু আমাকে দেখে দাঁত বের করে দিয়ে বললো,,
--দোস্ত তুই সকাল সকাল?
--কেন আমার কি সকালে আসা বারন?
এই বলে দোকানদার মামাকে বললাম,
--মামা কড়া করে চা দাও। সাথে কিছু ভালো বিস্কিট।
দুই বন্ধু মনে হলো আকাশ থেকে পরেছে এমন ভাব করে তাকিয়ে থেকে বললো,,
--কি রে তুই সকালে নাস্তা করিসনি? ঘরে নতুন বউ। কোথায় তাকে নিয়ে আজ সারা দিন রোমাঞ্চ করবি এখানে বসে চা খাচ্ছিস?
মেজাজ আগের থেকে গরম। ওদের কথায় আরো গরম হলো। ওদিকে দুজন খুব মজা নিচ্ছে। রাগের সাথে বললাম,,
--এই তোদের ঘরে কি বউ আছে?
এক বন্ধু বললো,,
--না নেই, কিন্তু আমাদের জানা আছে।
এই বলেই গা জলানো হাসি।
ঠিক এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করে বললাম,,
--হ্যালো কে?
--আমি অথৈ।
--অথৈ কে?
--ছি নিজের বউয়ের নাম জানো না।
--ও বলো ফোন করেছো কেন?
--কি করো সোনা?
মেয়েটা শুধু পাগল না বেহায়া ও বটে। বিয়ের পর দিন কি সব বলছে। আমার কথা শুনে দু বন্ধু কান খাড়া করে আছে ঠিক খরগোশের মতো। আরে বাবা তোদের এতো আগ্রহ কেন পরের বউয়ের কথা শোনার।
ওকে আবার বললাম,,
--ফোন করেছো কেন?
--আগে বলো কি করছো?
--বন্ধুদের সাথে নাচানাচি করি।
--এমা তুমি নাচতে ও পারো।
--কেন ফোন করেছো বলবে নাকি রাখবো।
--বলছি শোন, আমার জন্য আসার সময় কিছু তুলা আনতে পারবে?
--তুলা দিয়ে কি করবে?
--না মানে তুমি তো রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খুব নাক ডাকো তাই তোমার নাকে ভরে রাখবো।
ওর কথা শুনে ফোন টা কেটে দিলাম। ওরা শুনতে পেলে আমি শেষ। রাগে ইচ্ছে করছিল ফোন টা ভেঙে ফেলি। আল্লাহ আমাকে উঠায় নাও। বউ যখন দিলে কি বউ দিলে।
রাগে শরীর কাপছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। অপমানের একটা সিমা থাকা উচিত। সারা দিন এদিকে ওদিকে ঘুরলাম। দুপুরে ভিষণ খিদে পেয়েছে। সারা দিন তেমন খাওয়া হয়নি। তাই বাসার দিকে গেলাম।
কলিং বেল বাজাতেই অথৈ এলো দরজা খুলতে। ওকে দেখে পুরো হা হয়ে গেলাম। আমার টি শার্ট পরে দাড়িয়ে আছে। আমি ওকে রাগের সাথে বললাম,,,,,,,