Bangla Golpo (সংসার) Bengali Story - Bangla Love Story

bangla story, bangla golpo, bengali story, bangla love story, bangla fairy tales, bengali golpo,

সংসার
পর্ব তিন এবং শেষ
লেখা অধরা জেরিন

আগের পর্ব গুলো:


ফারাবী আমার কথা শুনে রেগে গেলো খুব। কোনো পুরুষ জীবনের আরেকবার বিয়ের কথা শুনলে এতোটা রেগে যেতে পারে আমার জানা ছিল না।
আমাকে বললো,,
-- ইরা জীবনে সুখী হতে গেলে মানুষের জীবনে আরেকবার বিয়ে করাটা খুব জরুরি?

আমি ফারাবীর কথাটার মানে খুঁজতে লাগলাম। আসলে ও আমাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে। আমি ওর কথা শুনে চুপ করে গেলাম।

আমি ফারাবী কে এটা নিয়ে আর কখনো কিছু বলতে যেতাম না।

এভাবে কেটে গেলো দু বছর। বেশ কাটছিল সব কিছু। একদিন নিয়মের বাইরে কিছু ঘটতে যাচ্ছে আমার জানা ছিল না। হটাৎ করে একদিন ফারাবীর প্রচন্ড জ্বর এলো। এতো তীব্র জ্বর যে শরীর মনে হচ্ছিল পুড়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করলাম। খবর পেয়ে ওর বাবা মা এলো। কিন্তু দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যেতে লাগলো। জ্বর থেকে ধরা পরলো ওর কিডনিতে সমস্যা হয়ে গেছে। এবং খুব গুরুতর অবস্থা। আমাদের হাতে সময় ছিল কম। আর তা না হলে ফারাবীর বড্ড তাড়াহুড়ো। তাইতো দেরি না করে চলে গেলো সব মায়া ছিন্ন করে।

ওর হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় এতোটা ভেঙে পরেছিলাম যে এক সময় মানসিক রুগী হয়ে যেতে লাগলাম। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করতো না। কারণে ও কারণে কান্না পেতো। সব কিছু ঘিরে অপূর্ণতায় ভরে রাখতো। মনে হতো পৃথিবীতে আমি সত্যি ভিষণ একা। যখন আমাদের জীবন থেকে কিছু চলে যায় তখন বুঝতে পারি আসলে সে জীবনের কতোটা মূল্যবান ছিলো।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকমাস। ফারাবীর বাবা মা ছেলের শোকে পাথর হলেও আমার খোঁজ খবর নিতে ভুল করতেন না। সব থেকে অবাক করা বিষয় হচ্ছে দুই পরিবারের লোক মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন করে আমাকে বিয়ে দিবে।

আচ্ছা এরা কেন বোঝ না পৃথিবীতে সুখী হতে গেলে মানুষের আবার বিয়ে করাটা কি খুব জরুরি??

কিন্তু ফারাবী তো বুঝতো,।
ও তো কখনো চাইনি আমার জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে ভাবতে।
আসলে আমরা মেয়েরা বড্ড স্বার্থপর। নিজেদের সুখের জন্য সব পারি।
তাই তো আমার জীবনে নতুন করে আরেকজন মানুষের আগমন হলো।

অবশ্য এতে আমার একার দোষ বললে ভুল হবে। এটা ফারাবীর বাবা মায়ের ইচ্ছে টাই বেশি। কারণ ফারাবী মৃত্যু শয্যায় নাকি বাবার হাত ধরে বলেছিল,,
--বাবা তোমাদের কাছে ইরাকে রেখে গেলাম। আমার থেকে ভালো কাউকে পেলে তার কাছে ওকে দিয়ে দিও।

সত্যি খুব আশ্চর্য তাই না !!
নিজের বউকে অন্য লোকের কাছে তুলে দেওয়ার কথা বলে যাওয়া।

আমি ও খুব অবাক হয়েছিলাম ওর কথা শুনে। যে কিনা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে সে সেই মুহূর্তে ও আমার কথা চিন্তা করছে।
আসলে এটা আমার পোড়া কপাল নাকি সৌভাগ্য বুঝতে পারছি না।

আমার জীবনের আরেকজন মহা মানব আরিন।
কে এই আরিন?
যে কিনা সব জেনেশুনে আমায় বিয়ে করতে রাজি হলো।
কিছু কিছু মানুষের জীবন সত্যি গল্প বা উপন্যাসের পাতার সাথে মিলে যায়।
আমার জীবন ও ঠিক সেভাবে মিলে গেছে।
তাই তো আমার মতো মেয়েকে ভালোবাসা দিয়ে নতুন করে বাঁচতে শেখায়।

আরিন আমার অপরিচিত কেউ ছিল না। আমার খুব পরিচিত একজন। একই সাথে লেখা পড়া করা। ছোট বেলা এক সাথে খেলা ধুলা করতাম দুজন। এস এস সি পরীক্ষার পর আরিন আর গ্রাম এ থাকেনি।

লেখা পড়া করতে শহরে চলে যায়।
মাঝে মাঝে আসতো গ্রাম এ। আমার সাথে দেখা হলেই শুধু একটা কথা জিজ্ঞেস করতো, কেমন আছো ইরা?

আমি উত্তর দেওয়ার আগে হনহন করে চলে যেতো।
ওর এরকম আচরণ দেখে আমি আর জারা হেসে লুটোপুটি খেতাম।

অবাক হয়েছিলাম সে দিন যেদিন আরিন আমার জন্য বিয়ের কথা বললো। এতোটাই অবাক হলাম মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছিল না।

সবার চাপাচাপিতে শেষ অবধি বিয়েতে রাজি হলাম।

আজ বিয়ে,,
জীবনের আরেকবার বিয়ের সাজে আমাকে সাজতে হলো। আজ নিজের থেকে কারো কারো মুখে হাসি ফুটানো যেন বেশি দরকার হয়ে দাড়িয়ে ছিল। আমার অতীত মাটি চাপা দিয়ে আমি বর্তমান নিয়ে জীবন চলতে শুরু করলাম।

আমার বাসর।

বাসর নিয়ে নতুন করে কিছু লেখার নেই আর।
আমি বসে আছি সেই আগের মতো করেই। শুধু ফারাবী র সৃতি মুছে দিয়ে। কারণ এক মনে দুজনকে নিয়ে সংসার করা যায় না।

আরিন আমার সামনে বসে আছে। সেই মুখ সেই চশমা আর সেই মুচকি হাসি।

আমি কি বলবো খুঁজে পাচ্ছি না। আরিন হয়তো আমার মন বুঝতে পারছিল তাই তো বলে উঠলো,,

--কেমন আছো ইরা?

ওর কথা শুনে মনে পরে গেলো সেই সব কথা। মনে মনে হাসি ও পেলো। আবার পালাবে নাতো?

আমি ওর দিকে না তাকিয়ে বললাম,,

-- ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
--ভালো ছিলাম না কিন্তু এখন থেকে অনেক ভালো থাকবো।
ওর কথা শুনে একটু অবাক হলাম। কি বলতে চায় আরিন?
আমি ওর দিকে ভালো করে তাকালাম। চোখে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করলাম। বললাম,,
-- তোমার কথা বুঝলাম না?
--তোমার বুঝতে হবে না। চলো তোমাকে নিয়ে বাইরে চাঁদ দেখবো।
-- বাইরে যে অনেক অন্ধকার আরিন? তুমি তো অন্ধকার অনেক ভয় পাও। (এটা বলেই হেসে দিলাম। আরিন খুব ভিতু ছোট বেলা থেকে এটা আমরা সবাই জানতাম)
হঠাৎ করে আরিন আমার কথা শুনে খাটের উপরে উঠে এসে হাত ধরে বললো,,,

--ইরা আমাকে ছেড়ে আবার চলে যাবে না তো?

আমি ওর কথা শুনে হা করে আছি। ও কি আমার মধ্যে অন্য কাউকে খুঁজছে? নাকি আরিন একটা সময় আমাকে,,,,,,,

---হ্যা ইরা, একটা সময় তোমাকে আমি পাগলের মতো ভালোবেসেছি। কিন্তু বলতে পারিনি। বার বার ফিরে গেছি। পরের বার যখন বলতে এসেছিলাম সব শেষ হয়ে গেছিলো।তুমি অন্য কারো হয়ে গেলে।
কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারি নি। আমি তোমাকে পেয়েছি ইরা তবে একটু দেরি করে। কিন্তু আবার পেয়েছি এটা আমার জন্য জীবনের অনেক বড়ো পাওয়া।

আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো আরিনের কথা শুনে। চোখ ভিজে যাচ্ছে নতুন করে। ঠোঁট কাঁপছে শুধু। মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। আরিন আবার বললো,,,

-- তুমি কোনো দিন মা হতে পারবে না এটা আমি জানার পর ঠিক করেছিলাম তোমাকে আমি দেশের বাইরে নিয়ে যাবো চিকিৎসা করাতে। কতো কি ভেবে রেখেছিলাম একা একা। শুরু বলতে সাহস পাইনি।

আমি নিজেকে কনট্রোল রাখতে পরলাম না। কেঁদে উঠলাম বাচ্চাদের মতো করে।
আরিন খুব ভালোবাসা মাখা হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,,

-- তোমাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি ইরা। আমাদের নতুন করে একটা সংসার হবে। যে সংসারে থাকবে শুধু আদর ভালোবাসা প্রেম সব কিছু।

আমি কেঁদে যাচ্ছি। আমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। শুধু পানি ঝরছে। মাঝে মাঝে এমন হয়। কথা বলতে ইচ্ছে করে না শুধু চোখের পানি ফেলে কষ্ট দুঃখ সব মুছে ফেলতে ভালো লাগে।


সমাপ্ত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url