Bangla Love Story (চলো পালাই - পর্বঃ দুই) Bangla Valobashar Golpo

গল্পঃ চলো পালাই
পর্বঃ দুই
লেখাঃ অধরা জেরিন

পর্ব এক


ছেলে টি কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো ইয়ে না মানে ,,,,,,!!
কি না মানে করছেন ? কি ভেবেছেন আমি বাড়ি থেকে বোরকা পরে পালিয়ে এসেছি। মোটেই না। আমি এবার এইস এস সি দিয়েছি।
ছেলে টা এবার একটু জোরে ধমকের সুরে বললো সেই তখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছেন । আমি আপনার কাছে এতো কিছু শুনতে চেয়েছি। বাঁচাল মেয়ে একটা । যান সরে বসুন।

ছেলে টার কথা শুনে হা করে রইলাম । আমাকে ঝাড়ি। তাও আবার পাশের ছিটে বসে । দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি । আমি পাশের ছিটে সরে বসলাম । সময় আসুক জব্দ করবো।
এর ভিতরে গাড়ি ছেড়ে দিল। আমার আবার রাতের জার্নি খুব ভাল লাগে । বাইরের দিকে তাকালে জোনাকির আলো আর ঝিঝি পোকার ডাক। ভিষন ভাল লাগে । সারা রাত গাড়িতেথাকতে হবে । ভোরে আমাদের গাড়ি সিলেট গিয়ে থামবে । আমি মোবাইলে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম । বোরকা টা খুলে ফেলেছি। কারণ এখন আর কোনও ভয় নেই। আমার পাশের ছিটে বসে থাকা ছেলে টি আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে। একটু পর দেখলাম ছেলে টি নিজের ফোন বের করে টিপাটিপি করছে । ভাব কতো। ভেবেছিলাম পাশের ছিটে যেই বসবে তাঁর সাথে গল্প করে রাত টা কাটিয়ে দেব। কিন্তু না বসেছে একটা খচ্চর। ইচ্ছে করছে ,,,,,,!!!
কি বাড়ি থেকে কেন পালিয়েছেন ? তাও আবার রাতের আধারে । জোর করে নিশ্চয়ই বিয়ে দিচ্ছিল । কি ঠিক বলিনি ??
ছেলে টার কথা শুনে একটু চমকে গেলাম । কি করে বুঝতে পারলো । নাহ এখন কোনও মতে ধরা দেওয়া যাবে না। তাহলে আরও পেয়ে বসবে। আমি বললাম কে বলেছে আপনাকে এই সব ফালতু কথা ।আমি আমার এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি । কেন পালাবো হুম ??
ছেলে টি বললো ওহ তাই !! ভাল, ।।

আমি বললাম আর আপনার এতো কিছু শুনতে হবে কেন ? আপনি মনে হচ্ছে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছেন । ছেলে টি বললো আপনি একদম ঠিক ধরেছেন । আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। আমাকে আমার বাবা নিজের বিজনেস সামলাতে বলেছে আর হুমকি দিয়েছে এক মাসের মধ্যে ঘরে বউ আনবেন । আমি শুনে বললাম কেন আবার বউ আনবেন আপনার মা বুঝি বেঁচে নেই ???
ছেলে টি কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললো মানে !! আরে আমার জন্য বউ আনবেন । কিন্তু আমার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। কারণ আমি মনে মনে ছোট বেলা থেকে ঠিক করেছি যে আমি প্রেম করেই বউ আনবো । আমি ছেলে টির কথা শুনে হেসে দিয়ে বললাম হুম বুঝেছি আপনি ছিনেমার নায়কদের মতো হতে চান। ওই যে ভালবেসে বউ আনবো তাঁর মতো। ছেলে টি আমার কথা শুনে হেসে দিল। এবার আমাকে বললো তুমি আমার ছোট হবে তুমি করেই বললাম কি নাম তোমার ?? আমি মনে মনে চিন্তা করলাম ছেলে টাকে সঠিক নাম বলা ঠিক হবে না । কিন্তু তার আগেই সে বললো ওহ মনে পড়েছে তোমার নাম অধরা । খুব সুন্দর একটা নাম । আমি বললাম আপনার নাম টা তো জানা হলো না ??
ছেলে টা বললো আমার নাম আলিফ। আমি বললাম তাই নাকি । জানেন আমার একটা ফেসবুকে ছেলে বন্ধু আছে ওর নাম আলিফ। ছেলে টি বললো হুম শুধু বন্ধু নাকি অন্য কিছু ? আমি আলিফ কে বললাম না না অন্য কিছু নয়। মাত্র একদিন ছেলে টার সাথে কথা বলেছি।

এই ভাবেই আমি আর আলিফ অনেক গল্প করলাম । আলিফের স্কুল জীবনের কথা । ওর কি কি ভাল লাগে না লাগে সব কিছু । এক সময় আলিফ আমাকে বললো আচ্ছা অধরা তুমি কখনও প্রেম করেছো ??
আমি আলিফের কথা শুনে হেসে দিয়ে বললাম প্রেম করবো আমি ??? আমাকে তো দেখলে পাড়ার সব ছেলে রা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় । ও অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বললো কেন ?? তোমাকে দেখে কেন পালিয়ে যায় ?? আমি বললাম একবার একটা ছেলে আমাকে ভালবাসার কথা বলেছিল । তাকে আমি কান ধরে এক হাজার বার আমার সামনে উঠবস করিয়েছি। তার পর থেকেই ও আমার সামনে আর পড়তো না। সেই থেকে পাড়ার ছেলেরা আমাকে আর ভালবাসার কথা বলতে সাহস পায়নি ।

আলিফ কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হো হো করে হেসে দিয়ে বললো তুমি তো খুব মজার মানুষ । তা ছেলে টাকে বিয়ে কেন করলে না ? পছন্দ হয়নি বুঝি ?
আমি এবার আলিফ কে বললাম আপনি আসলে অনেক চালাক । ঠিকই ধরেছেন ছেলে টা একটা মফিজ। পান খাওয়া মফিজ। আমার একদম পছন্দ না। আমার কথা শুনে আলিফ আরো হাসতে লাগলো । আমি ওকে বললাম আপনার আমার কথা শুনে অনেক হাসি পাচ্ছে তাই না। আলিফ বললো আরে তা নয়। তোমার কথা কেন জানি শুনতে খুব ভাল লাগছে ।

এর ভিতরে ছোট চাচার ফোন । আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কোনও সমস্যা হচ্ছে নাতো ? আমি বললাম না চাচা তুমি কোনও চিন্তা করো না । আমি ঠিক আছি। দাদু কি করছে ? সারা বাড়ি চিৎকার করছে মনে হয়। ছোট চাচা বললো প্রথমে একটু চিৎকার করেছিল এখন ঘুমিয়ে আছে । আর বলছিল খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেবে আমার নাতি হারিয়ে গেছে এই বলে । আমি ছোট চাচা কে বললাম তাহলে কি হবে ছোট চাচা । চাচা বললো আরে তুই চিন্তা করিস না আমরা আছি। আর শোন গাড়ি কোথাও থামলে কিছু খাবার কিনে খেয়ে নিস। কোনও চিন্তা করিস না । আমরা সবাই ঠিক আছি।

আলিফ আমাকে বললো তোমার দাদু কে বুঝি ভিষন ভয় পাও ??
আমি বললাম আর বলবেন না। আগে দারোগা ছিল । সেই দাপট আজও আছে । আলিফ বললো ওহ্ আচ্ছা । অধরা তুমি আমাকে তুমি করেই বলতে পারো সমস্যা নেই। এই বলে হেসে দিল। এই প্রথম আমি একটু লজ্জা পেলাম । আলিফের হাসিটা আমাকে গভীর ভাবে হৃদয় এ ছোঁয়া দিল।

কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম । চারিদিকে বেশ আলো ফুটেছে । আমার পাশে আলিফ নেই। কোথায় গেল ও ?? গাড়ি ও চলছে না । হয়তো এখানে কিছু সময় থামবে । আমি বোতলের পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম । অনেক খিদে পেয়েছে । কিছু খাওয়া দরকার । কিন্তু কিছুই তো চিনি না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম অনেক দোকান । আমি কিছু টাকা নিয়ে খাবার কিনতে গেলাম ।

এসে দেখি আমার কিছু নেই সব উধাও । কাপড় চোপড় মোবাইল টাকা পয়সা কিছু নেই। আমি হা করে দাড়িয়ে আছি । এমন সময় আলিফ এসে বললো কি ঘুম ভেঙেছে ? হা করে কি দেখছো। আমি এবার চিৎকার করে কেঁদে দিয়ে বললাম আমার সব চুরি হয়ে গেছে । আলিফ বললো চুরি হয়েছে মানে তুমি কোথায় ছিলে। আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম নিচে খাবার কিনতে । এসে দেখি কিছু নেই। এখন আমি কোথায় যাবো ? আমার বন্ধুর ঠিকানা ও এক সাথে ছিল । এমন কি ফোন টা ও নেই। আলিফ আমাকে বললো তুমি আসলেই একটা পাগল এভাবে কেউ নিজের সব জিনিস রেখে বাইরে যায় । আমি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলে না । ওর কথা শুনে আরো কাঁদতে লাগলাম । বললাম এখন আমি কি করবো কোথায় যাবো। আলিফ গাড়ির সবাই কে জিজ্ঞাসা করলো এমন কি ড্রাইভার কে ও। সবাই বললো আমরা জানিনা। এই শহরে খুব চুরি হয়। আপনাদের সাবধানে চলা উচিত ছিল । একটু পর গাড়ি ছেড়ে দিল। কে চুরি করেছে কেউ বলতে পারলো না। আলিফ বললো আমি দেখবো কি করা যায় । আগে সিলেট যাই তারপর থানায় জানাবো। আমি কেঁদেই চলেছি।

অচেনা শহর। কোথায় যাবো। টাকা ও নেই যে খুলনা ফিরে যাবো । আলিফ আমাকে বললো আর কেঁদো নাতো । কিছু একটা উপায় বের করবো । আচ্ছা তোমার বন্ধুর ফোন নম্বর টা বলো। আমি চোখের পানি মুছে বললাম ওর নম্বর আমার মুখস্থ নেই। ফোনে ছিল । ও কিছু টা অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বললো তোমাকে কেন একা একা আসতে দিল আমার মাথায় আসছে না। আবার ওনি নাকি অনেক চালাক। আমি এবার রেগে গিয়ে বললাম দেখ ভালো হচ্ছে না কিন্তু । আমি কি জানতাম এখানে এসে সব হারাতে হবে ?? এমনই ভাল লাগছে না আর তুমি শুধু বকাবকি করছো । মনে হচ্ছে তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড্ ।আলিফ হেসে দিয়ে বললো আচ্ছা ঠিক আছে কিছু বলবো না। তুমি চলো আমার সাথে ? আমি বললাম কোথায় যাবো ? ও বললো আমার বন্ধুর বাসায় । ওখানে গেলে তুমি নিরাপদ থাকবে । পরে একটা কোনও উপায় বের করা যাবে। আমি বললাম কেন যাবো তোমার বন্ধুর বাসায় ? ও বললো তাহলে কি করবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরাবে ? ওর পরিবারের সবাই থাকে তোমার কোনও সমস্যা হবে না ।

আমরা এসে সিলেট পৌছালাম। খুব সুন্দর জায়গা । মন টা ভাল করে দেওয়ার মতো দৃশ্য । আলিফের সাথে ওর বন্ধুর বাড়িতে আসলাম । আলিফ কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে ওর বন্ধু নীল বেরিয়ে এলো। আমাকে দেখেই হেসে দিয়ে আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো বাবা মা দেখে যাও আলিফ আমাদের না জানিয়ে ওর নতুন বউ এনেছে । আমি আর আলিফ নীলের চিৎকার শুনে দুজন দুজনের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম ।

পর্ব তিন