শত্রুতা
পর্ব-শেষ
লিখা-আয়েশা


রিফাত বিছানা ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠল।সারা বাড়িতে খুজলো কোথাও রিয়া নেই।
রুপার কাছে কল দিয়ে বললো
__ আপু রিয়া আছে আপনার ওখানে।
__না তো ও তো চিনেই না এখানে আসবে কি করে।
আচ্ছা আচ্ছা আমি খুঁজে দেখছি।রিফাতের মাথা ঘুরাচ্ছে কিচ্ছু চিনে না কোথায় গেল মেয়েটা।

রিফাত হন্নহারা হয়ে খুঁজতে লাগল।ওর বাবা মায়ের কাছে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করার সাহস পেল না।অনেক মেরেছে তাই হয়তো মেয়েটি রাগ করে কোথাও চলে গেছে।
রিফাত খুব টেনশনে আছে।এভাবে তিনদিন কেটে গেল।রিফাত নিজেকে মাফ করতে পারছে না।

সেদিন রাতে ফোন বেজে উঠল,রিফাত ভয় পেয়ে গিয়ে ফোন ধরলো
__হ্যালো
__হ্যালো,রিফাত বাবা
রিয়ার বাবা ফোন করেছে।রিফাত সালাম দিল রিয়ার বাবা বললো
__ রিফাত বাবা রিয়া দেশে এসে পড়ছে তোমাকে না বলে আসছে তাই কথা বলতে ভয় পাচ্ছে।তুমি ওর উপরে রাগ করোনা।ও কখনো আমাদের ছেড়ে থাকেনি তো তাই। তুমি যেই গলার হার দিয়েছিলে ওটা বিক্রি করেই দেশে এসেছে।নাও কথা বলো ওর সাথে
__হে হে হ্যালো
__হুম হ্যালো তোকে যতটা নরম দেখা যায় ততটা নরম না তুই।তোর কত বড় সাহস আমাকে না বলে হার বিক্রি করে টিকিট কেটে বাংলাদেশে চলে গেলি।তুই কি ভেবেছিস এতেই আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবি।পালিয়ে গেলেও আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবি না।
__ আমার কিছুই করার ছিল না।বসে বসে মার খাওয়ার চেয়ে এর সমাধান খুঁজতে লাগলাম।পরে মাথায় আসল একটা বুদ্ধি।ঐ হারটা বিক্রি করলাম।
আর ওখানেই একটা বাঙালি মেয়ে আমাকে সাহায্য করলো টিকিট কেটে দিল, চলে আসলাম।
আর শুনুন ,
আমি পালাতে চাইলে আপনাকে কল দিতাম না।আপনি কি দেশে আসতে পারবেন।অনেক জরুরি কাজ আছে।

__এক সপ্তাহ হলো না আসছি এখন আবার দেশে যেতে বলছিস টাকা কি তোর বাবা দিবে।
__আমি যেই কারনে আসতে বলছি এটা আপনার কাছে কোটি কোটি টাকার চেয়ে ও মূল্যবান।
__এখন বল কি বিষয়।
__না ফোনে বলা যাবে না।
__আচ্ছা থাক তুই তোর বিষয় নিয়ে আমি আসতে পারব না।

কয়েকদিন পর রিফাত বাংলাদেশে হাজির।রিয়া মনে মনে হাসছে এই লোকটা বলে একটা আর করে একটা।রিয়া বললো ফ্রেশ হয়ে নিন।রিফাত ওর হাত ধরে টেনে বসাল ওর গাল ধরে চেপে বললো কি কারনে আসতে বলছিস তাই বল।
রিয়া বললো ছাড়ুন বলছি।
রিয়া একটা চিঠি এনে দিল রিফাতের হাতে
রিফাত পড়তে শুরু করলো

"প্রিয় রিয়াদ"
আমি জানি তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো কিন্তু আমার অতীত জানার পর ভালোবাসতে পারবে তো।আমরা এক ভাই আর এক বোন।চাচা চাচির কাছে থাকি আমি।ভাইয়াও ছিল এখন সে আমেরিকায়।তখন ক্লাস টেন এ পড়ি।একদিন দুপুরে ঘুমিয়ে ছিলাম।দরজা খোলাই ছিল।এর মধ্যে টের পেলাম কে যেন আমার শরীরে হাত দিতেছে।চোখ মেলে দেখলাম চাচির ভাই।আমি অনেক জোড়াজোড়ি করেও ওর হাত থেকে বাঁচতে পারলাম না।চাচি সম্ভবত বাসায় ছিল না।আমাকে বললো কাউকে বলবি না বললে এই ভিডিও তোর ভাইকে আর সারা দুনিয়ার লোককে দেখাবে।ও ঐ ভিডিওর ভয় দেখিয়ে আমাকে ইউজ করে ।কাউকে বলিনি আজ তোমাকে বললাম।হয়তো দেখবে একদিন আমি মরে গেছি কারন কারও হাতে জিম্যি হয়ে বেচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো।
"ইতি রায়না"

রিফাতের শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।রিয়া বললো __এটা কি আপনার বোনের হাতের লিখা।
রিফাত বললো
__হ্যাঁ আমি খুব ভালো করে চিনি ওর হাতের লিখা।এটা রায়নারই লিখা।চাচা চাচি এত বড় মিথ্যে বলতে পারলো আমার মৃত বোনটির নামে।

এখন দেখলেন তো আমার ভাই সম্পূর্ণ নির্দোষ।রিয়াদ ভাই ওর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে অচেতন হয়ে বাইক চালানোর সময় এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে।আপনাকে মিথ্যে কথা জানানো হয়েছে।

রিফাত খুব রাগ করে চাচার বাসায় গেল।রিয়াও গেল পিছন পিছন।রিফাতের চাচা সব কথা স্বীকার করে নিল।
হায় রে চাচা আপনি আমার বাবার ভাই।কি করে পারলেন আমার কাছে সত্যি লুকাতে।
তুই টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিবি তাই তোর চাচি কসম দিয়ে নিষেধ করেছে আমাকে।
ছি ছি চাচা কয়েকটা টাকার জন্য আমার কলিজার টুকরোটাকে মৃত্যুর দিকে পাঠিয়ে দিলেন।আমাকে জানালে আমি একটা ব্যবস্থা করতামই।ওকে অকালে মরতে দিতাম না।
আচ্ছা এখন শেষ একটা কাজ করুন ঐ কালপ্রিটটা কোথায় তাই বলুন।আমি ওকে খুন করবো।
না না রাগটা কমিয়ে শান্ত হোন ঐ চিঠিটার সাহায্যে ওকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া যাবে।চাচা বললো ও ঠিক বলেছে বাবা পুলিশে ধরিয়ে দাও আমি ঠিকানা দিচ্ছি।
ঐ শয়তানটাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল।

"আমি আপনার ঘর করি আর নাই করি,আমার ভাইকে নির্দোষ আর অপরাধীকে শাস্তি দিতে পেরেছি এতেই শান্তি"এক কথা বলে রিয়া বাসায় চলে আসলো।
মা বললো জামাই আসলো না, রিয়া কিছু না বলে রুমে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর রিফাত আসলো

এসেই রিয়ার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।রিয়ার পা ধরে বললো
__আমাকে মাফ করে দেয়া যায় না।জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি তাও তোমার মন অনেক বড় পারবে কি আমাকে ক্ষমা করে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে।

অনেক সময় ধরে রিয়া কিছুই বলছে না।তাই রিফাত উঠে চলে যাচ্ছিল এমন সময় রিয়া বললো
__মাফ করতে পারি এক শর্তে
__কি শর্ত বলো বলো
আমাকে সারাজীবন ভালোবেসে এই বুকে আগলে রাখতে হবে আর আমার গায়ে হাত তুলতে পারবে না।এই কদিন যেই মার খেয়েছি আমার লাইফেও এতো মার খাইনি।
একথা বলে আমাকে আর লজ্জা দিও না।আজ কথা দিচ্ছি এই বুকেই আগলে রাখবো সারাজীবন কখনও সরাবো না।
এই বলে রিয়াকে টান দিয়ে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল।আলতো করে বুকে জড়িয়ে আদর করলো।আর বললো
__এ কদিন মনে অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচেছি,আজ শান্তি লাগছে আমার আদরের বোনটির খুনিকে শাস্তি দিতে পেরেছি।আর নিজেকে খুব লাকি মনে হচ্ছে এত সাহসী একটা বৌ পেয়েছি
__তারপরেও সেদিন কিভাবে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিলে যদি কিছু হয়ে যেত
__না রে পাগলী আমি কিছু হতে দিতাম নাকি।এখন কয়েকদিন তোমার বাবা মায়ের কাছে থেকে পরে চলে যাবো।এবার তোমাকে পুরো আমেরিকা ঘুরিয়ে দেখাব।

আজ প্লেনে ওঠার সময় কোন খারাপ বা কষ্ট লাগা নেই কারন রিফাতের সাথে রিয়ার শক্রতা শেষ।
আমেরিকা পৌছে রিয়া শাওয়ার নিয়ে এসে দেখল পুরো রুমটা অন্ধকার
কেন্ডেল দিয়ে সাজানো,রিয়া দেখে অবাক হয়ে গেল।ওয়াও কি সুন্দর!
পিছন থেকে রিফাত জড়িয়ে ধরল,রিয়ার ভেজা চুলগুলো সরিয়ে আর একটা ডায়মন্ড এর হার পড়িয়ে দিল।রিয়া রিফাত কে জড়িয়ে ধরে বললো
__আমি এত দামি দামি উপহার চাই না শুধু তোমার বুকে এবং মনে স্থান চাই।
__তুমি বিশ্বাস করো এ মনে আর বুকে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।
__সত্যিই
__হা তিন সত্যি

এভাবেই শত্রুতা শেষ হয়ে গভীর ভালোবাসায় রূপান্তরিত হলো।

সমাপ্ত