শক্রুর সাথে বিয়ে
শেষ পর্ব
লিখা-আয়েশা
বিকেলে গেলাম একটু বীচে।ওখানে যাওয়ার পর হঠাৎ মুরাদকে কে যেন ডাক দিল ঘুরে দেখলাম একটা মেয়ে।
__মুরাদ বললো নিতু ও সুমা,সুমা ও আমার ওয়াইফ।__ওহ্ ফোনে কথা হয়েছিল আমাদের মেয়েটি বললো
আমি মনে মনে বললাম ভালোই তো এখানেও দাওয়াত করে আনা হয়েছে...
আমরা আসলাম হানিমুনে এখানে আবার এই মেয়েকে ডেকে আনার কি হলো আচ্ছা কি সম্পর্ক ওদের মাঝে প্রেম ভালোবাসা নয় তো।এমন কিছু থাকলে আমাকে বিয়ে করে বিপদে ফেলল কেন ওকেই বিয়ে করতে পারতো।শয়তান একটা ছোট বেলায় ডুবিয়ে মারতে চেয়েছিল আর এখন মানসিক জ্বালা যন্ত্রণা দিয়ে মারবে।আমি ওদের বললাম আপনারা কথা বলুন আমি আসছি।
আমি একটু হাঁটাহাটি করছিলাম সমুদ্রের পাড় ঘেসে।এত ভালো লাগছে মনে হচ্ছে আমার মনের সব দুঃখ বেদনা সমুদ্রের এই ঢেউ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।মনে পড়ে যাচ্ছে সেই পনেরো বছর আগের কথা আমি মুরাদ আর মুরাদের ছোট বোন খেলছিলাম একটা নদীর ধারে হঠাৎ একটা কি কথা নিয়ে যেন ঝগড়া বেঁধে যায় আর মুরাদ আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয় সাঁতার জানতাম না ডুবেই যাচ্ছিলাম,বার বার মার মুখটা শুধু ভাসছিল আমার চোখে।আর কিছুই মনে নেই।চোখ মেলে দেখি আমি বিছানায়।সবাই মুরাদকে বকাঝকা দিচ্ছে।সবাই ভুলেও গেছে কিন্তু আমি ভুলিনি।কারন আমি না হয় ছোট ছিলাম ও তো বেশ বড় ছিল ওর বোন গিয়ে বড়দের ডেকে না আনলে আমি এতদিন মৃত থাকতাম।
এসব ভাবতে ভাবতে মুরাদ আসলো
__কি রে কি ভাবছিস
__আমি কি ভাবছি তা জেনে তোমার কি হবে।যাকে নিমন্ত্রণ করে এনেছো তাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকো।আমি চললাম।
রুমে এসে খেয়ে বই পড়ছি।হঠাৎ আমার হাত থেকে বইটা কেড়ে নিয়ে গেল।বললো
__এই নিতু আমরা কি বই পড়তে এসেছি।
__আমার যা ইচ্ছা তাই করবো তোমাকে বলতে হবে না কি করতে এসেছি
__বলতেই হবে কারন তুই আমার বৌ
__চুপ বেশি বৌ বৌ করলে চিৎকার করে সব লোকজন ডেকে নিয়ে আসবো কিন্তু বলবো তুমি আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছো আরো কত কি
একথা শুনে মুরাদ মন খারাপ করে সোফায় শুয়ে পড়ল।কয়েকদিন এভাবেই কেটে গেল।একদিন বিকেলে দেখলাম ঐ মেয়েটির হাত ধরে খুব আনন্দে গল্প করছে।দেখে আমার প্রচন্ড রাগ হলো।আমি না দাড়িয়ে সোজা রুমে চলে গেলাম।রাত দশটা পেরিয়ে গেল এখনও আসছে না।সাড়ে দশটায় দরজা নক করল।
__কে
__আমি মুরাদ খোল
__না খুলব না এত রাত করে এসে আবার বলে দরজা খোল।ঐ সুমি না টুমি ওর কাছে গিয়ে রাতটাও কাটিয়ে আসতে।
__প্লিজ দরজা খোল সব বলছি
__আমি কোন কথা শুনতে চাই না খুলব না ব্যস
অনেক ডাকাডাকি করল আমি খুললাম না।সকাল আটটায় কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙল।রুম সার্ভিস করতে এসেছে লোকটি বলল ম্যাডাম স্যার এই কাগজটি আপনাকে দিতে বলেছে।আমি কাগজটি খুলে পড়তে শুরু করলাম
নিতু
আমি কি ভুল করেছি যে তুই আমাকে এত শাস্তি দিস।সেই ছোটবেলার ভুলের শাস্তি কি সারাজীবন ধরে আমাকে বয়ে যেতে হবে।কতবার ক্ষমা চেয়েছি তুই হয়তো ক্ষমা করবি না।আর শোন সুমি আমার ছোট বেলার বান্ধবী।ওর সাথে আমি সব সেয়ার করি।এ ব্যাপারে তুই হয়তো আমাকে সন্দেহ করিস।কিন্তু আমার বুঝ হবার পর থেকে তোকেই ভালো লেগেছে এক মনে এক ধ্যানে শুধু তুই আর তুই,নইলে এত অপমান সহ্য করেও তোর কাছে বারবার ফিরে আসতাম না।তুই কোনদিন আমাকে মাফ করতে পারবি না জানি তাই তোকে যেভাবে পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম ঠিক তেমনি করে নিজেও আজ মরে যাবো।কাল রাতে আমার শেষ বোঝা হয়ে গেছে এত ডাকা সত্তেও তুই দরজা খুলে দেখলি না যে আমি আছি নাকি চলে গেছি বা কোথায় যাবো।আসলে তুই আমাকে ঘৃণা করিস আর শত চেষ্টা করেও আমি সেই ঘৃণা ভালোবাসায় রূপান্তরিত করতে পারবো না তাই তোর জীবন থেকে সরে গেলাম
ইতি
হতভাগ্য এক স্বামী
আমি চিঠিটা পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বীচে গেলাম।দৌড়ে খুঁজতে থাকলাম। সকালে তেমন লোক থাকে না তাই সব ভালো করে খুঁজতে থাকলাম কিছু দূরে দেখতে পেলাম একটা লোক সমুদ্রের পাড়ে উপুর হয়ে পড়ে আছে ,কাছে গিয়ে দেখলাম
মুরাদের মতো টিশার্ট গায়ে।আমার বুক ধুকধুক করতে লাগল।আমি কাছে গিয়ে লোকটিকে চিৎ করতেই দেখি মুরাদ।
আমি কাঁদতে কাঁদতে বলতে দেখলাম এ তুমি কি করলে আমি তো উপরে উপরে রাগ দেখাচ্ছিলাম বিয়ে যখন হয়েই গেছে তোমাকে কি আমি অন্য মেয়ের সাথে সহ্য করতে পারি তাই রাগ করে দরজা খুলে নি তাই তুমি এসব করবে।আমাকে এত কষ্ট দিবেআমি বসে বসে কাঁদছি
হঠাৎ কাথে কে যেন হাত রাখল।আরে সুমি মেয়েটা, বললো ভাবী থামেন যা হওয়ার হয়ে গেছে আসলে আপনি ওকে খুব কষ্ট দিয়েছেন।তাই ও সহ্য করতে পারেনি।মুরাদ আমাকে সব বলেছে।আর আপনি তো ওকে সহ্য করতে পারতেন না ভালোই হয়েছে আপদ বিদায় হয়েছে।আমি রেগে একটা চড় মারলাম।
__চুপ করুন ও আমার স্বামী এভাবে আর একবার বললে খবর আছে
__কাল রাতে এ কথা মনে ছিল না
__রাত দুইটা অবধি দরজায় বসে থেকে পরে আমাকে কল দেয়।ফোনটা ধরে আমার স্বামী।আমরাও এখানে ছুটি কাটাতে এসেছি ভাগ্যক্রমে আপনাদের সাথে দেখা হয়ে যায়।পরে আমার স্বামী মুরাদকে আমাদের বাসায় আসতে বলে সব শুনে বলে আরে মিঞা এতদিনেও বৌ কে লাইনে আনতে পারেন নি আপনি কেমন পুরুষ
__বাকিটা আমি বলি
ভাবী আমি সুমির হাসবেন্ড আমি মুরাদকে বুদ্ধি দিলাম চিঠি লেখার।কিন্তু কি লিখেছে কে জানে তাই অভিনয় টা পারফেক্ট হলো কি না নিজের চোখে দেখার জন্য এখানে এসে হাজির হলাম
__কি বলছেন অ অ অভিনয়
তাকিয়ে দেখলাম মুরাদের বডিটা নেই।আমি বললাম প্লিজ সব বলুন
এই যে নবাব সামনে আসুন।মুরাদ কে জীবিত দেখে আমার বুকটা শীতল হয়ে গেল।আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম এই শয়তান এরকম করলে কেন?যানো কতটা ভয় করছিল।প্লিজ আর কোনদিন এরকম করবে না আমাকে রেখে যাবে না।ও বলল
না রে পাগলী তুই একটু ভালোবাসা দিলে আমি কোথায় যাবো তুই তো আমার পৃথিবী।
এই যে ভাই ভাবী এখানে অনেক লোকজন আছে রোম্যান্স রুমে গিয়ে করুন। সবাই দেখে হাসাহাসি করছে।আমি লজ্জা পেলাম।সুমি আর তার হাসবেন্ডকে ধন্যবাদ জানালাম।
সুমি বললো যাক শত্রু এখন মিত্র হলো
এক সপ্তাহ পর বাবার ফোন
__কি রে তোরা কবে আসবি
__মামা কি বলছেন সবেমাত্র হানিমুন শুরু, আরো এক সপ্তাহ পর ভাববো কবে ফিরবো।
আমি ফোন রেখে বললাম এই নির্লজ্জ শশুড় কে কেউ এভাবে বলে