গল্প-উপকার
লিখা-আয়েশা সিদ্দীকা
একদিন বিদুৎ বিল দিতে গিয়ে দেখি একজন বুড়ো লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।আমার থেকেও চারজনের পিছনে।অনেক বড় লাইন।সরকারকে টাকা দেয়ার লাইন,একটু দেরী হলে আবার জরিমানা গুনতে হয় তাই পনেরো তারিখের মধ্যে সবাই আসে বিল ক্লিয়ার করতে।
আমাদের চারতলা বাড়ি।আমি একা আমার আর কোন ভাই বোন নেই।তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই সব বিল দিতে হয়।বাবা মারা গেছে তিন বছর হলো।মা কে দিলে ভুল করে ফেলে তাই আমিই দেই।
আগে দেখতাম নারী পুরুষ আলাদা লাইন এখন আবার এক লাইন করে দিছে।আমার আবার বুড়ো মানুষ দেখলে খুব মায়া হয়।তবে সেই বুড়োর মুখে দাঁড়ি থাকতে হবে।নামাজ কালাম পড়া বুড়ো লোক।কিছু কিছু বুড়ো আছে এক পা কবরে তাও আবার ক্লিন সেভ করে বসে থাকে।
তবে এই লোকটাকে দেখে খুব মায়া হলো আমার।লোকটি কেমন যেন করছে।হয়তো নানান রোগে আক্রান্ত।আমি কাছে গিয়ে বললাম,
আঙ্কেল আপনার কি অনেক খারাপ লাগছে।আপনি ওখানে গিয়ে না হয় বসুন।আমি আপনার বিলটা দেই।আমার মুখ ঢাকা লোকটি আমাকে বিশ্বাস করলো না।অনেক টাকার বিল হয়তো।আমি বললাম টাকা দেয়ার সময় আপনি দিবেন।বিলের কাগজ গুলো অত্যন্ত আমার কাছে দিন।
পরে লোকটি রাজি হলো।আমি মনে মনে ভাবলাম
কেমন এর পরিবারের লোক,এমন একজন অসুস্থ লোককে এত বড় লাইনে দাঁড়িয়ে বিল দেয়ার জন্য পাঠায়।
আমি একবার মাকে পাঠিয়েছিলাম আমার পরীক্ষা ছিল তাই।কতবার যে ফোন করেছে।এই বিদুৎ বিল কত,এই পানির বিল যেন কত।তাই আর মাকে না পাঠিয়ে আমি দেই।আমার বিল দেয়া হলে আমি ওনার কাগজ গুলো দিলাম কয়েকজন রাগ করল লাইনে পরে দাড়িয়ে আগে কেন দিবে।কয়েকজন আবার বললো থাক লোকটি অসুস্থ।আগে দিতে দিন।ওনার কাগজ জমা দিয়ে আমি চলে আসছিলাম।পিছন থেকে ডাক দিল
__এই শোনো
__জী বলেন
__তোমার নাম কি?
__জী আমার নাম দিশা
__ওহ্ তোমাদের নিজের বাড়ির বিল দিলে
__জী
__তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে তোমার জন্য তাড়াতাড়ি হলো নইলে আরো এক ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হতো।
__আরে না আঙ্কেল কি যে বলেন।আপনি মুরুব্বি মানুষ এটুকু সাহায্য তো করতেই পারি।
__না রে মা এখন পৃথিবীর সবাই স্বার্থপর হয়ে গেছে।কেউ কারোর উপকার করতে চায় না।
__সবাই তো আর এক না।আচ্ছা আঙ্কেল আমি চলি বাসায় যেতে হবে।মা চিন্তা করবে।
বাসায় এসে মাকে বললাম ঘটনা মা বললো ভালই করেছিস।নে এখন খেতে আয়।খেতে বসেছি মা বললো
__পরীক্ষা তো শেষ বিয়ে করবি না
__কি বলছো এখন কিসের বিয়ে
__কিসের বিয়ে মানে বয়স বেড়ে যাচ্ছে এখন বিয়ের সময়।বয়স বেড়ে গেলে পরে ভালো পাত্র পাওয়া যায় না।আর তোর যদি কোন পছন্দ থাকে তবে বল
__না মা আমার কোন পছন্দ নেই।তবে ভালো চরিত্রের ছেলে হতে হবে টাকা পয়সা না থাক।ভালো চরিত্র মানে শুধু মেয়ে লোভী নয়।সৎ পথে টাকা উপার্জন করা।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া।মুরুব্বিদের কথা মেনে চলা এসব আর কি।
__এমন ছেলের অভাব নেই
__তুমি কি পাগল হয়ে গেলে।আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমাকে দেখবে কে?
__তা ভাবতে হবে না গ্রাম থেকে একটা মেয়ে নিয়ে আসব।আর তুই মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবি।তবে আর দেরি করা যাবে না।
__তোমার যা ইচ্ছা তাই করো গিয়ে
মা পাত্র দেখা শুরু করে দিল।আমাকে দেখতে আসল।ভাগ্য ভাল এক দেখায় পছন্দ হয়ে গেল ওদের।আর আমারও ছেলেটিকে ভালো লাগলো।এখন চরিত্র ভিতরে ভিতরে কেমন তা জানি না।ছেলেটির নাম মুরাদ ভালো একটা চাকরি করে।ফোন নম্বর নিয়ে গেল।আমাকে মাঝে মাঝে ফোন দেয় কথা বলি।
কয়েকদিন পর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেল।শপিং করলাম সবাই মিলে।ভালোই লাগল ওদের ফ্যামিলি,সবাই মিশুক।আমার পছন্দ মতো সব কেনাকাটা হলো।এরমধ্যে আবার একদিন বিল দিতে গিয়ে ঐ আঙ্কেলের সাথে দেখা।আমাকে দেখে প্রথম কিছু বলে নাই।পরে বললো
__ এই তুমি কি দিশা
__জী আপনার মনে আছে
__হুম তোমার মতো মেয়ের কথা ভুলতে পারি
__বাড়িয়ে বলছেন আপনি কি এমন করেছি আমি
__ সে যাই হোক তোমার মা কেমন আছেন?
__জী ভালো,আঙ্কেল একটা কথা
আমার বাবা নেই আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে আপনি যদি এসে দোয়া করে যেতেন।
__অবশ্যই আসবো।তোমার বিয়ে দাওয়াত যখন দিয়েছো আসতে আমাকে হবেই,ঠিকানা বলো
__শাপলা কমিউনিটি সেন্টারে চলে আসবেন
__ঠিক আছে মা আমি আসব
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসল।আমি পার্লার থেকে সেজেগুজে কমিউনিটি সেন্টারে এসেছি।সবাই খাওয়া দাওয়া করছে।কেউবা ছবি তুলতেছে।আমি দেখলাম ঐ আঙ্কেল টাও এসেছে,আমার কাছে আসতেই আমি মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম
কিছুক্ষণ পর একটা ফোন আসল মায়ের ফোনে। ফোনটা ফেলে মা অজ্ঞান হয়ে যায়।ফোনটা অন্য কেউ ধরে জানতে পারে।বরের গাড়ি আসার সময় একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে এক্সিডেন্ড হয়।মাইক্রোতে ছিল দশজন সবাই আহত হয়েছে।যারা পিছনে ছিল তারাই আহত হয়েছে।কিন্তু সামনে ছিল বর আর ড্রাইভার।তারা দুজনেই মারা গেছেন।আমি দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লাম।সব স্বপ্ন আমার ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
মার চোখে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হলো।
মা খুব কাঁদছে,আর বলছে
আমার বাপ মরা মেয়েটার এখন কি হবে।এত খুশির একটা সময়ে কি হয়ে গেল।আরো অনেক কিছু বলে বিলাপ পাড়ছে।আমি একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছি।হঠাৎ ঐ আঙ্কেল এসে আমার মাকে বললো
__আপা একটা কথা বলি আপনার মেয়েকে যদি আমার ছেলের বৌ করে নেই আপনি রাজি হবেন।আমার ছেলে বেকার নয় ও ভালো একটা চাকরি করে।
__কি বলছেন ভাই এসব
__জী আপা ঐ দিন ব্যাংকে আপনার মেয়ের পরোপকারী স্বভাব আমার মন কেড়ে নেয়।আমি মনে মনে ঠিক করে ফেলি ওকে আমার ঘরের বৌ করে নিব।কিন্তু ও বললো ওর বিয়ে তাই কিছু বলি নি।প্লিজ আপা এখন আপনি রাজি হয়ে যান
__আমার মেয়ে কে জিজ্ঞেস করে নেই
মা আমার কাছে এসে বললো
আমি মনে মনে ভাবলাম
সেদিনের ছোট্ট উপকার যে আজ, এত বড় অর্থে আল্লাহ্ ফেরত দিবেন তা ভাবতে পারি নি।
(ব্রি:দ্র:-পৃথিবীর যে প্রান্তেই আপনি কারোর উপকার করেন না কেন আল্লাহ্ আপনার জন্য ফিডব্যাক তৈরি করে রাখে আপনার অজান্তেই)