Bangla Golpo (সংসার) Valobashar Golpo | Romantic Story

Bangla Golpo (সংসার) Valobashar Golpo | Romantic Story

সংসার
পর্ব এক
লেখা অধরা জেরিন


-বুবু দ্যাখ দ্যাখ এই লাল শাড়িটা কতো সুন্দর।
ইসসস চুড়ি গুলো ও কতো দামী। আলতা, কাজল,লিপিস্টিক সব দামী দামী। বুবু সত্যি তোর কপাল ভালো এতো সুন্দর একটা জামাই পাইছোস।
- জারা, এবার এ ঘর থেকে একটু বের হ। আমার কাজ আছে।
-ইরা আপু, তুমি সব সময় এমন করো কেন? কাল তোমার বিয়ে। আজ একটু আমার সাথে গল্প করো?
-আমার মন ভালো নেই।
- আপু, সত্যি করে বলোতো তুমি কি এই বিয়েতে রাজি না?

জারার কথা শুনে চোখ দুটো উদাস হয়ে গেলো। ফিরে গেলো কয়েকবছর অতিতে। এই লাল শাড়ি আমার জীবনের প্রথম না। কয়েকবছর আগে ও এই লাল রঙে আমার অতিত রাঙানো ছিল। কিন্তু আমার ভাগ্য আমাকে সুখ দিতে নারাজ ছিল। তাই তো বিয়ের ঠিক তিন বছর পর সব মায়া ছিন্ন করে ফারাবী চলে গেলো।

গ্রামের সহজ সরল একটা মেয়ে আমি ইরা। সারাদিন মুখে হাসি লেগেই থাকে। গাছের মেহেদী হাতে দিয়ে হাত রাঙানো ছিল আমার নিত্য দিনের কাজ। চুলে তেল মেখে লম্বা দু পাশে বেনী না বাঁধলে মনে হতো আমার সাজগোজ অগোছালো হয়ে আছে। আর চোখের কাজল তো আছেই। সব মিলিয়ে আমি যেন ঠিক উড়ন্ত ফড়িং ছিলাম।

জারা আমার ছোট বোন। ভিষণ দুর্দান্ত আর চটপটে। পাড়ায় সব ছেলে ওকে দেখলে দু হাত দুরে থাকে। অবশ্য জারার জন্য আমি ও শান্তিতে চলতে পারতাম। আমাদের গ্রামের পাশের গ্রাম ছিল ফারাবীদের। ওকে আমি সে দিন প্রথম দেখেছিলাম। আমাদের মাঠে ফুটবল টিম এসেছিল ওদের গ্রাম থেকে। ও ছিল তাদের মধ্যে একজন।

দু দিন ধরে মাঠে অনেক আয়োজন চলছে। আমি আর জারা অনেক কষ্ট করে বাবাকে পটিয়ে রাজি করেছিলাম। পরদিন সকালে আমি তৈরি হচ্ছি। আমার রোজ যে কাজ ছিল তাই। চোখে কাজল চুলে লম্বা বেনী। সে দিন জারা আমার চুল দেখে চোখ পাকিয়ে বললো,,,

- বুবু, তুই কি এভাবে ছাড়া চলতে পারিস না?
ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,,
- এভাবে মানে?
- চুলে এভাবে কেউ তেল দিয়ে চুপসে রাখে? আমাকে দ্যাখ কি ভাবে চুল বেঁধেছি?
- শোন জারা, আমরা ওখানে ডেটিং করতে যাচ্ছি না। খেলা দেখতে যাচ্ছি।
- বুবু তুই এখনো সেকেলে থেকে গেলি।

ওর কথা শুনে হেসে দিয়ে বললাম,,
--চলেন রানী এলিজাবেথ দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আমি আর জারা মাঠে আসতেই খেলা শুরু হয়ে গেলো। আমি ভালো করে মাথায় ওড়না পেচিয়ে শুধু চোখ দুটো বের করে বসলাম। জারা আমাকে ওভাবে দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

হঠাৎ করে আমার মাথায় এসে একটা বল পড়লো। আচমকা খুব ব্যথা পেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি ফারাবি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে। চোখে বুঝাতে চাইছে ইচ্ছে করে এমন করেনি।

জারা আমার পাশে বসে রেগে ফুলে ওঠলো। এমন ভাব এখনি ফারাবীর মাথা ফাটাবে। আমি ওর হাত চেপে ধরে বললাম,
- ছেলেটা ইচ্ছে করে এমন করেনি। তুই শান্ত হ।

জারা আমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো। কিন্তু আমার মাথায় ব্যথা আস্তে আস্তে বারতে লাগলো। আমি জারা কে বললাম,,
--আমি ঘরে যাবো জারা। ভালো লাগছে না।
--সে কি বুবু? মাত্র খেলা জমেছে। আর একটু দেখি।

জারার কথা শুনে আরেকটু বসলাম। কিন্তু একটা ব্যাপার আমার চোখে পরলো। ফারাবী চোখের ইশারায় আমায় কিছু বলতে চাইছে। হয়তো আমার মাথায় কেমন লেগেছে সেটা জানার ইচ্ছে।

এক সময় খেলা শেষ হলো। ফারাবীদের দল জিতে গেলো। এখন ঘরে যাওয়ার পালা। আমি জারার হাত ধরে হাটতে লাগলাম। এমন সময় পিছন থেকে কেউ ডাক দিয়ে বললো,

-এই যে শুনুন?
আমি কিছু বলার আগে জারা বললো,,
- আপনি? কি চান আবার? আমার বুবুর মাথা আপনার জন্য এ অবস্থা। আপনি আমাদের গ্রাম এ নতুন। না হলে মজা দেখাতাম।

এক হাত কোমড়ে অন্য হাত উঁচু করে কথা গুলো এক নাগাড়ে বলে গেলো জারা।
ফারাবী মুচকি হেসে দিয়ে বললো,,

- বাহ, তুমি তো দারুণ করে কথা বলো। আমি ফারাবী। শহরে একটা জব করি।

জারা কিছু সময় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললো,,
- আর কিছু বলবেন?
- তোমার নাম টা বলে যাও?
- আমার নাম আপনাকে কেন বলবো?
- কেউ নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলতে হয়।

এভাবে জারা আর ফারাবীর ভিতরে খুব খাতির হয়ে গেলো। হাটতে হাটতে আমাদের বাড়ির সামনে চলে এলাম। এমন সময় ফারাবী বললো,,
- তোমার নাম জারা। আর তোমার আপুর নাম?
- ওমা আপুর নাম জানেন না। ইরাবতী আপুর নাম। সবাই ইরা বলে ডাকে।
- অনেক সুন্দর নাম। আচ্ছা জারা আমি এখন যাই
। আবার আসবো তোমার সাথে গল্প করতে।

এই বলেই আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে হনহন করে চলে গেলো। ফারাবীর সাথে যা কথা বলার জারাই বলেছে। কিন্তু ও চলে যাওয়ায় সাথে সাথে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

ফারাবী যদি ও আমাকে দেখেনি চোখ ছাড়া। আর চোখ দেখে প্রেম এ পরার মতো ছেলে হয়তো ও না।
যাই হোক পরের দিন জারা বিকেলে দৌড়েতে দৌড়াতে এসে বললো,,,

- বুবু কই তুমি?
- কিরে হাঁপাচ্ছিস কেন?
-তোমার জন্য একটা জিনিস আছে?
- আমার জন্য কি জিনিস? জারা সব সময় এমন মজা ভালো লাগে না।

জারা পিছন থেকে হাত দুটো সামনে এনে দেখিয়ে বললো,,

-এই দেখো কি?

আমি ওর হাতে মেহেদী কাজল চুলের ফিতা আরো কিছু কসমেটিক দেখে হা হয়ে গেলাম। ওকে বললাম,,

- জারা এ গুলো কোথায় পেলি? বাবা কিনে দিয়েছি বুঝি?
- না বাবা দেয়নি।
- তাহলে কে দিয়েছে?
-ফারাবী ভাইয়া,।

ফারাবী নাম টা শুনে বুকের ভিতরে ধুক ধুক করে উঠলো। ছেলেটা কেন দিলো এ সব। তাহলে কি,,,,,!!

জারা চুপ করে থাকতে দেখে বললো,,
- আজ বিকেলে ফারাবী ভাইয়া আসবে।

ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,,

-তোর কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আসবে মানে?
- বুবু তুমি আসলে বোকা। তোমাকে দেখতে আসবে।
-
জারার কথা শুনে বললাম,,
- দেখতে আসতে হবে না। কাল রাতে আমার মাথার ব্যথা কমে গেছে।

জারা এবার মহা পন্ডিতের মতো হেসে দিয়ে বললো,,

- আপু তুমি আসলে কিছু বোঝ না। ফারাবী ভাইয়ার বাবা মা সবাই আসবে। তোমাকে দেখতে।

জারার কথা শুনে আমি হা করে আছি। মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেলো। কাল যে ছেলে আমার সাথে কথা ও বলেনি সে আজ আমাকে দেখতে আসবে।

জারার কথাই সত্যি হলো। একটু পর মা এসে বললো,,

- ইরা বিকেলে তুই ঘর থেকে বের হবিনা।
-মা তুমি জানো না?বিকেলে আমি একটা বাচ্চা পড়াই।
-আজ থাক মা। তোকে দেখতে চায় পাশের গ্রামের তোর বশির চাচার বড়ো ভাই, তাঁর একমাত ছেলে ফারাবী, আর ওর মা।
- আবার সেই বিয়ে? কেন করো এমন রোজ রোজ?
- এভাবে সারা জীবন কাটাতে পারবি একা একা?
-একা কোথায় মা? তোমরা আমার সব।
-তোর সমস্যা আমরা লুকাবো না ইরা। সবাই জেনে যদি তোকে বিয়ে করে তাহলে সমস্যা কোথায়?
-ঠিক আছে আমি নিজেই এটা নিয়ে ছেলের সাথে কথা বলবো।
-আচ্ছা তাই হবে।

বিকেলে আমি ছেলে মানে ফারাবীর সামনে বসে আছি। আমার গায়ে জড়ানো টুকটুকে লাল ওড়না। এটা অবশ্য জারা জোর করে পরিয়ে দিয়েছে।

ফারাবী আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
-আপনি একটু অবাক হচ্ছেন এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা বললাম।

আমি ওর কথা শুনে চুপ করে আছি। মনে মনে কথা সাজালাম।

ফারাবী বললো,,
-আপনার কিছু বলার নেই?
-আছে, আপনাকে আমার কিছু বলার আছে? এটা আগের থেকে বলাই ভালো?
-কি কথা বলুন? দেখুন যদি মনে করেন কারো সাথে আপনার রিলেশন আছে তাহলে আমি সরি আপনাকে বিরক্ত করার জন্য।
-আমার সাথে কারো রিলেশন নেই।
-তাহলে বলুন কি কথা?

আমি একটু ঢোক গিলে বললাম,,

পর্ব দুই 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url