Bangla Golpo (সেকেন্ড ওয়াইফ) Romantic Love Story

সেকেন্ড ওয়াইফ
পর্ব এক
লেখা অধরা জেরিন


আমি কোনো দিন ভাবতে পারেনি আমার ও একটা অতিত থাকবে। যে অতিত ভুলাতে অন্য কেউ আসবে আমার সেকেন্ড ওয়াইফ হয়ে।
সিনেমা বা গল্প উপন্যাসের পাতায় যে ঘটনা গুলো আমরা দেখি ঠিক সেরকম একটা বাস্তব ঘটনা ঘটেছিল আমার জীবনে ও।

আমি রেজা। আর দশটা ছেলের মতো জীবন যাপন আমার। সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠা। মায়ের মিষ্টি মিষ্টি বকুনি খেয়ে তাড়াহুড়ো করে নাস্তা সেরে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় চলে যাওয়া।
লেখা পড়া সবে মাত্র শেষ করেছি। বাবার ব্যাবসা আছে বিরাট। তাই আপাতত বিন দাশ জীবন যাপন করার ইচ্ছে।
সেদিন দিন টা ছিল আমার জীবনের একটা ডায়েরির ছেড়া পাতার মতো একটা অংশ।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করছি এমন সময় মা বললো,,

-- এভাবে আর কতোদিন কষ্ট দিবি?
খাওয়া বাদ দিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- কিসের কষ্ট দিলাম। ঘুম থেকে দেরি করে উঠলে তোমার কষ্ট হয় আচ্ছা যাও কাল থেকে সকাল সকাল উঠবো এবার খুশি?

মা আমার কান মলে দিয়ে বললো,

-- তোকে ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠতে বলিনি। এবার বিয়ে করে ঘরে বউ আনতে বলেছি।

মায়ের কথা শুনে হেসে দিয়ে বললাম,
-- আচ্ছা মা! বিয়ে করিয়ে দিয়ে ঘরে অশান্তি আনতে চাও। এভাবে ভালো আছি।
-- তোর এতো বেশি বুঝতে হবে না। দ্যাখ তো মেয়েটা কেমন পছন্দ হয় তোর?

এই বলে আমার দিকে একটা ছবি এগিয়ে দিলো।
আমি কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললাম,

-- মেয়ের চোখ বেশি বড়ো। চলবে না। চোখের দিকে তাকালে আমার ভয় করবে হা হা হা।

মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাইক নিয়ে চলে গেলাম বাইরে।
আড্ডা দিচ্ছি সবার সাথে এমন সময় অপরিচিত একটা নম্বর থেকে ফোন এলো।
আমার আবার অপরিচিত নম্বর দেখলে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। তাই ইগনোর করে যাচ্ছি। কিন্তু ফোন বেজেয় যাচ্ছে।


একটু বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করলাম,, ওপাশ থেকে মিষ্টি একটা কন্ঠ ভেসে এলো। বললো,,
--- ফোন কেটে দিচ্ছেন কেন বার বার?
--- কে আপনি?
--- আমার নাম মালিহা।
--- মালিহা? আপনাকে চিনতে পারছি না? কে আপনি?
---আমার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
--- বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে?
--- এমন ভাব করছেন আপনি কিছু জানেন না। আপনার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে আপনি প্লিজ আমার কথা গুলো শুনুন?
--- দেখুন আমি অনেক বিজি। যা বলার আমার মাকে বলবেন। বায়।


এই বলেই ফোন টা কেটে দিলাম। সামনে সব বন্ধু ওরা জানতে পারলে ভিষণ হাসাহাসি করবে। তাই ইচ্ছে করে ইগনোর করলাম। কিন্তু কানে বার বার মিষ্টি কন্ঠ টা বেজে উঠছিল।

দুদিন পর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো মালিহার সাথে। আমি লজ্জায় ওর সাথে কখনো ফোনে কথা বলিনি। কিন্তু ওর মিষ্টি কথা গুলো শুনতে ভিষণ ইচ্ছে করতো।

মালিহা ও আমাকে আর কখনো ফোন করিনি। আমার মনে হতো ও হয়তো আমার মতো লাজুক। মনে মনে ঠিক করে রাখলাম বাসর ঘরে ওর সাথে মন ভরে সারা রাত গল্প করবো।

বাবা মা সবাই খুব খুশি। তাদের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করছি। অবশ্য আমি ও কম খুশি না।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো। আনুষ্ঠানিকতা সব শেষ হলো যথানুযায়ী। মালিহা এলো আমার ঘরে। ওকে দেখার জন্য বড্ড ছটফট করছি। বন্ধুরা ও কম না। আমায় এটা ওটা বলে ঠাট্টা করতে লাগলো। ওদের সামনে সাহস দেখালে ও ভিতরে ভিতরে ঘেমে যাচ্ছি।


মালিহার জন্য একটা শাড়ি আর সোনার নেকলেস নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। এটা ওকে দেওয়া আমার বাসর ঘরের গিফট।

ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু আমার মন খারাপ হয়ে গেলো কারণ ও গুনগুন করে কান্না করছে ঘোমটার ভিতরে। আমি চিন্তা করলাম সবাই কে ছেড়ে এসেছে এ জন্য এমন করছে।

ওর কাছে গিয়ে ঘোমটা সরাতে যাবো এমন সময় ও চিৎকার করে বলে উঠলো,,,

-- এবার খুশি আপনি আমাকে বিয়ে করে?

ওর কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না। কেন এমন করছে। আমি ওর হাত ধরে কিছু বলতে যাবো তখন ও আবার বলে উঠলো,,,

--- একটা কাজ করুন আমার জন্য বিষ এনে দিন আমি খেয়ে মরে যাই।

আমি হা করে আছি ওর কথা শুনে। নিজেকে কনট্রোল করে বললাম,,
-- আপনার সমস্যা কি বুঝতে পারছি না? আমায় বলবেন প্লিজ কি হয়েছে?
ও এবার দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বললো,,,


--- সে দিন ফোন করে আপনাকে আমি বলতে চেয়েছিলাম আমি একজন কে ভালোবাসি আপনি এই বিয়ে করবেন না। কিন্তু আপনি ইগনোর করলেন আমায়।
-
ওর কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেলো। চিৎকার করে বললাম,,

-- এ সবের মানে কি?

কিভাবে চিৎকার করলাম জানি না। দরজার টোকা পরলো। আমি খুলতে আপু জিজ্ঞেস করলো,,

-- কি রে রেজা এভাবে চিতকার করলি কেন? কোন সমস্যা?

তাড়াতাড়ি আপুকে বললাম,,

--- কিছু না তুমি যাও।

আপু চলে যেতে আবার দরজা বন্ধ করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,,

--- তাহলে আপনি কেন বিয়েতে রাজি হলেন?
--- বাধ্য করেছে আমায় রাজি হতে। অনেক ঝড় বয়ে গেছে আমার উপর দিয়ে প্লিজ আমায় আপনি মাফ করে দিন। আমি আপনাকে ভালো বাসতে পারবো না।

এটা ছিল আমার জীবনের বিরাট ধাক্কা। মেয়ে হলে হয়তো হাউমাউ করে কেঁদে নিজেকে হাল্কা করতে পারতাম। কিন্তু আমি যে পুরুষ তাই বুকে পাথর রেখে শাড়ি আর নেকলেস সামনে দিয়ে বললাম,,

--- এটা আপনার জন্য। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।

আমি ওর সামনে থেকে সরে এসে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালাম। নেশা নেই কিন্তু এখন কেন যেনো খেতে খুব ইচ্ছে করছিল।

রুমে এসে দেখি শাড়ি ও পরেনি। ও গুলো ওভাবে পরে আছে। মালিহা নিজের মতো করে ঘুমিয়ে আছে। ভিতরে ভিতরে কষ্টে নীল হয়ে যেতে লাগলাম।
বালিশ টেনে নিয়ে নিজের মতো করে শুয়ে পরলাম। মালিহার শরীর থেকে পারফিউম এর গন্ধ আর বাসর ঘরের কাঁচা ফুলের গন্ধ আমার কষ্ট আরো বারিয়ে দিতে লাগলো।

হায় আল্লাহ তুমি কেন এমন করলে। জীবনের এর থেকে কষ্ট আর কিছু তে নেই যখন জানতে পারা যায় জীবন সাথী অন্য কাউকে ভালোবাসে।

সারা রাত নির্ঘুম কেটে গেলো। মালিহা গভীর ঘুমে মগ্ন। ভোর হতেই বাইক নিয়ে বাইরে চলে গেলাম। কেউ ঘুম থেকে উঠার আগে।

অনেক সময় ঘুরাঘুরি করলাম এদিক ওদিক। কিন্তু শান্তি নেই কোথাও।
এর মধ্যে বাবার ফোন। রিসিভ করতে বললো,,

--- কি রে সকাল থেকে তুই উধাও? কোথায় গেছিস?
--- বাবা আমার ফিরতে দেরি হবে। অনেক জরুরি কাজ আছে।
--- রাখ তোর কাজ। আগে বাসায় আয়।
--- বাবা বললাম তো আসতে দেরি হবে।
--- তোর শ্বশুর বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে তোর সাথে দেখা করতে চায়। তাড়াতাড়ি চলে আয়।

বাবার ফোন রেখে বাড়ির দিকে আসতে লাগলাম। মালিহা কি করছে কি জানি। হয়তো ওর ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে চিন্তা করছে।

বাসায় এসে দেখি অনেক মানুষ। সবাই বলছে তোমাকে আর মালিহাকে নিতে এসেছি।
আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি।

সবার সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। মালিহা একটা বার ও ঘর থেকে বাইরে বের হয়নি। আমি এবার ঘরে ঢুকলাম। নিজের ঘর কিন্তু নিজের কাছে আজ অপরিচিত লাগছে।

আমায় দেখে মালিহা বললো,,,

পর্ব দুই