ভুলের মাশুল
পর্ব-২
লিখা-আয়েশা
রুহি এতটাই মগ্ন হয়ে গেল রোহানের প্রতি ওখানে যে ওদের দুজনের উপস্থিতি ছাড়া ও আরেকটা চোখের দৃষ্টি যে ওর উপর তা খেয়াল করে নি।আরেক জোড়া চোখ রুহির সর্বশরীর খুব আকাঙ্খা নিয়ে দেখছে এটা রুহি কল্পনাও করতে পারে নি
ও কল্পনাও করতে পারে নি রোহান ওর সাথে এতটা নিষ্ঠুর আচরণ করবে।সেদিন রোহান ওকে ছাড়তেই চাইছিল না।রোহান বললো আরেকটু থাকো না।রুহি বললো না আজ আর থাকা যাবে না মা অনেক চিন্তা করবে।রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে।আরো দু ঘন্টা লাগবে বাসায় যেতে।
রোহান ওকে জড়িয়ে ধরে শেষ চুমু টা দিল।
রুহি ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
রুহি গাড়িতে বসে সব কথাগুলো ভাবতে লাগল কি হয়ে গেল কি করলো ও।পরক্ষণেই রোহানের পাগলামি গুলো ওর মনে পড়তে লাগল আর কেমন যেন একটা ভালোলাগা তৈরি হতে থাকল।রুহি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে গেল।চার ঘণ্টা পর উঠল।উঠে ফোন চেক করলো।ফোন রেখে রীতিমতো রুহি অবাক হয়ে গেল,
একটা কল ও নেই রোহানের।কিভাবে বাসায় ফিরল রুহি কেমন আছে।ও তাহলে ওর শরীরের তৃপ্তি শেষ তাই আর কোন চাহিদা নেই।আসলে সব ছেলেরাই সমান একজনকে ব্যবহার শেষ আবার নতুন শরীরের খোঁজে বেড়িয়ে পড়ে।রুহি খুব রাগ করলো।ও কোন কল দিল না।
রাত দশটা বেজে গেল তাও কোন কল নেই।রুহি আর সহ্য করতে না পেরে কল দিল।ফোন বন্ধ মেসেজ পাঠাল।রোহান অনলাইনে নেই।মেসেজ সিন করছে না।রুহি পাগলের মতো হয়ে গেল।কি হলো রোহানের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কেন।রুহি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে ঘুম ভাঙল মেসেজের শব্দ পেয়ে।রুহিকে লাফ দিয়ে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখে।কে যেন একটা ভিডিও সেন্ড করেছে।রুহি ভিডিও দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।এতো ভালোবাসার মানুষটি কখন এসব করলো।
রোহানকে ফোন দিল এবারও ফোন বন্ধ পেল।নিশ্চয়ই ব্লাকমেন করার জন্য এমন করেছে।রুহি খুব বড় ভুল করে ফেলেছে।অনেক বড় পাপ করেছে,তাই আল্লাহ্ ওকে শাস্তি দিচ্ছে।সেদিন কলেজে গিয়ে দেখে সাইমা জেনে গেছে।
রুহির ঘুম ভেঙে গেল ওর মায়ের চিৎকার শুনে।ও দৌড়ে গিয়ে দেখল ওর বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে।রুহি তাড়াতাড়ি ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বললো।বাবাকে নিয়ে হসপিটালে আছে দুদিন হলো।সুস্থ হয়ে উঠে বসল।রুহি কাছে যেতেই ওর বাবা বললো
__এই তুই আমার কাছে আসবি না
__কেন বাবা,প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও
__রুহির মা তুমি জানো কি কারনে আমার বুকে ব্যথা হয়ে অসুস্থ হয়েছি।আমার এক বন্ধুর ছেলের সাথে ওর
বিয়ের কথা বললাম ঐ বন্ধু কত কথা শুনিয়ে দিল এরকম বাজে মেয়ে কে ওরা বিয়ে করবে না।ওরা কেন কেউই করবে না।এই মেয়ে কে নিয়ে আমি কিভাবে সমাজের সামনে দাঁড়াব তুমিই বলো।
__এখন কি করবে মেয়ে ভুল করেছে আমরা ওর বাবা মা,আমাদের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
__বাবা তোমরা যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাতেই রাজি।যা বলবে তাই হবে,তারপরেও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না বাবা।
কয়েকদিন হসপিটালে থাকার পর বাসায় গেল।রুহির বাবা মনে মনে ঠিক করে ফেললো।
ড্রাইভারটা ওদের বাড়িতে আজ ছয় বছর।খুব ভালো একটি ছেলে।নাম রায়হান
ওকে একবার বলে দেখবে রুহিকে বিয়ে করার কথা।আগে রুহিকে জানালো ব্যাপারটা।রুহি মনে মনে হাসল
যে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায় নি এখন তাকে অনুরোধ করে আমাকে বিয়ে করার জন্য রাজি করাতে হবে।কি আর করা ভুল আমি করেছি ভুলের মাশুল আমাকেই দিতে হবে।আর ওর চলাচল ততটা খারাপ না ভদ্র ছেলেটি দেখতেও ততটা খারাপ নয়।
__আচ্ছা বাবা তুমি যা ভালো মনে করো তাই হবে।
__দেখি ছেলেটি রাজি হয় কি না।কারন যত গরীবই হোক না কেন ভালো চরিত্রের একটা মেয়ে সব ছেলেই আশা করে।তুই তো সেটা নস।
__আচ্ছা দেখ ঐ ড্রাইভার এর দয়া হয় কিনা
পরদিন রুহির বাবা রায়হান কে ডেকে এনে বললো
__ তুমি কি বিয়ে করেছো রায়হান?
__জী না স্যার
__তাহলে আমি একটা আবদার করবো রাখবে
__হায় আল্লাহ্ একি বলছেন স্যার আমার কি আছে বলুন দেবার মতো।আমি আজ ছয় বছর যাবৎ আপনার কর্মচারী সব সময় বিপদে আপনার কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি,বলুন কি করতে হবে।
__যদি বলি রুহিকে বিয়ে করতে করবে
__স্যার এ আপনি কি বলছেন আমি কি ওনার যোগ্য
__আগে ছিলে না কিন্তু এখন সম্পূর্ণ যোগ্য একটা ছেলে তুমি ওর জন্য,কারন ও একটা ভুল করেছে।রোহান নামের এক ছেলের সাথে রিলেশন করেছে ছেলেটি ওর বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে।এখন তুমি বলো এমন একটি মেয়েকে তুমি বিয়ে করবে কি না
__স্যার এত বছর আপনার নুন খেয়েছি,আজ এতটুকু করতে পারবো না,উনি একটা ভুল করেছে এটা ঠিক আছে কিন্তু আপনার দিকে চেয়ে আমি রাজি হয়ে গেলাম।
রুহি ম্যাডাম কে বিয়ে করবো
রায়হান রুহির দিকে একটু ভালোবাসা নিয়ে তাকালো
না মেয়েটি ভুল করেছে তাই একদম অসহায় লাগছে।
রায়হান ওর রুমে এসে কাকে যেন ফোন করে বললো
__এই ছেলেটিকে ছেড়ে দে আমার কাজ হয়ে গেছে
রায়হান মনে মনে খুব খুশী ওর কার্য সাধন হয়েছে তাই।এত দিনে ওর মনোবাসনা পূরণ হতে যাচ্ছে।
কারন রোহান আর রুহির সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্তটা সে ভিডিও করেছে।এতে রোহানের কোন দোষ নেই।
সেই তৃতীয় দৃষ্টি ছিল তার।
এদিকে রোহানকে অনেক মারধর করায় ও অনেক অসুস্থ হয়ে গেছে, উঠে দাঁড়াতে পারছে না