You will find here many types of stories like Bangla golpo romantic golpo love story valobasar golpo love at first sight school love story love you forever sad love story short love story romantic love story romantic story cute love story true love story college love story high school love story i will love you forever new love story Bangla story silent love valobashar golpo real love story love story quotes Bengali golpo 

বাবা - Bangla Golpo 2020, golpo, Bangla golpo, baba Bangla golpo, father story, Bangla story,

গল্পঃ বাবা
লেখকঃ ShaHadat (Devil KiNg)


আবির আর রিয়ার কথা আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি পাশের রুম থেকে।

রিয়াঃ এখানে তোমার বাবার এমন কি সমস্যা হয় যে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে আমি জানি না।মানুষ শুনলেও তো আমাদের খারাপ ভাববে!

আবিরঃ আমরা তো যেতে বলি নাই বাবাকে।উনি নিজ থেকে যাচ্ছেন।মানুষ খারাপ ভাববে কেনো?


রিয়াঃ মানুষ কি আর জানবে সেটা? ভাববে ছেলে,ছেলের বউ টেইক কেয়ার করে না,সারাদিন অফিস করে দুজন।বৃদ্ধ বাবাকে তাই আশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছে! অথচ কি না করছি আমরা ওনার জন্য!

আবিরঃ বললে বলুক।এটা তো আর সত্য না। আমরাতো আর পাঠাচ্ছি না। বাবা নিজ থেকেই যাচ্ছেন।
ওহ! আমার পরিচয় টা দিয়ে নেই। আমি ইমরান তালুকদার। বয়স ৭০। গত ৫ বছর ধরে বিপত্নীক। থাকি একমাত্র ছেলের সাথে ঢাকার মালিবাগে। ১ নাতি আছে আমার ।ক্যাডেট কলেজে পড়ে। ছেলে,ছেলে বউ ২ জন ই চাকুরীজীবী। সকালে বের হয়,রাতে ফিরে। আমি তাদের জন্য এক্টা এক্সট্রা বার্ডেন। না তারা কখনো মুখে কিছু বলে নি। কিন্তু আমি বরাবর ই বেশি বুঝি। জন্ম থেকেই বোধ হয়।
এই যেমন আমি সারাদিন কি খাব,বউমা কে তা গুছিয়ে যেতে হয়। আমার জন্য বউমা বাপের বাড়ি ও স্বামী নিয়ে বেড়াতে যেতে পারে না। আমাকে কে দেখবে! একা যায়। আরো সমস্যা যখন আমার নাতির কলেজে প্যারেন্টস মিটিং হয়। আমাকে একা রেখে রংপুর ক্যাডেট এ ২ জন যেতে পারে না।হয় বউমা যায় নয়ত ছেলে। আমার নাতির হয়ত মন টা চায় বাবা মাকে একসাথে দেখতে। কিন্তু আমার জন্য সেও তো কত স্যাক্রিফাইস করছে! আমার গিল্টি ফিল হয়।

৬ বছর বয়সে আমার মা মারা যায়,আমার ভাইয়ের জন্ম দিতে গিয়ে। ভাই টাও পরে বাচে নি। মা মারা যাবার পর সবাই যখন খুব কাদছিল,আমার কি হবে বলে বিলাপ করছিল,বাবা আমাকে ধরে খুব কাদছিল,তখনই আমি বুঝে ফেললাম যে আমার মন খারাপ করা যাবে না। তাতে বাবা, নানা, নানী, দাদী (দাদা মারা গিয়েছিলেন আগেই) আরো বেশি কস্ট পাবেন। আমি একটু ও কাদি নাই। মায়ের জন্য যে কত মন খারাপ হত মাঝে মাঝে! আমি তাও সবার সামনে কাদতাম না। রাতে সবাই ঘুমালে বিছানায় শুয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতাম। মা মারা যাবার বছর খানেক পর বাবা আবার বিয়ে করলেন।আমি বাবার রুম থেকে দাদীর রুমে ট্রান্সফার হলাম। এবার ও আমার মন খারাপ হয় নি। নতুন মা যেন আমার উপর বিরক্ত না হন,তাই তো দাদী নিয়ে আসলেন আমাকে তার রুমে।

নতুন মায়ের ২ ছেলে মেয়ে হলো। আমার ভাই বোন। আমি অনেক ভালোবাসতাম ওদের। নতুন মা সব সময় মাছ,মুরগীর বড় টুকরো গুলো ওদের দিত। আমি কিন্তু মন খারাপ করতাম না। কারণ মা ঠিক ই সবচেয়ে ছোট টুকরো টা নিতেন। আমি দেখতাম। তখন বুঝতাম তার নিজের চেয়েও আমাকে তিনি বেশি ভালবাসেন। সন্তানদের চেয়ে একটু কম আর কি। এই যা। বাবার সাথে ধীরে ধীরে এক্টা দূরত্ব হয়ে যাচ্ছিল। আমিই সরে যাচ্ছিলাম। নতুন মা খুব ক্লোজনেস পছন্দ করবেন না হয়ত এই ভেবে।


আমি কথা খুব কম বলতাম কিন্তু প্রচুর চিন্তা করতাম।নানা বাড়ি কম যেতাম। আমাকে দেখলে নানা নানীর কন্যা শোক জাগ্রত হত বেশী। তাই আরকি!

আমার তেমন কোন বন্ধু ছিল না,কথা কম বলতাম আর বেশি বুঝতাম তাই হয়ত। বন্ধু থাকলে তারা হয়ত তাদের মা বাবা বা পরিবার নিয়ে সুন্দর সুন্দর গল্প করবে,আমি করতে পারব না উল্টা মন খারাপ হবে,তাই হয়ত মিশতাম না ওভাবে কারো সাথে।

এস এস সি দিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। জেলা শহরের একমাত্র কো এডুকেশনাল কলেজে। মেয়েদের সাথে আগে জীবনেও ক্লাস করিনি। কেমন এক্টা শিহরণ।

কিন্তু কেউ আমাকে পাত্তা দিবে না,তাই নিজেকে দমিয়ে রাখলাম। মেয়েদের বন্ধু হবার যোগ্যতা আমার নেই।

হঠাত একদিন ক্লাস শেষে দাঁড়িয়ে আছি। এক মেয়ে এসে বললো আপনার কাছে ৫ টাকা ভাংতি হবে?
ভাংতি ছিল, দিলাম। মেয়েটা নিয়ে চলে গেলো। ধন্যবাদ দিয়ে। চেনা চেনা লাগলো মেয়েটাকে।ও হ্যা,আমার সাথেই পড়ে। ক্লাসে একদিন দেখেছিলাম। কেমন এক্টা দুখী দুখী চেহারা। চোখে মনে হয় অনেক কস্ট লুকানো।


বেশ কিছুদিন পর আবার মেয়েটার সাথে দেখা। খুব বৃষ্টি। ক্লাস শেষে সবাই আটকা। কিন্তু মেয়েটার এই বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফেরার যেন খুব তাড়া। সে বের হয়ে হাটা শুরু করলো। ভিজে ভিজে যাচ্ছে দেখে কেনো যেন খুব মায়া হলো।ব্যাগে ছাতা ছিল আমার। এগিয়ে যেয়ে মেয়েটাকে ছাতা সাধলাম।প্রথমে নিতে চায়নি। পরে কি মনে করে নিলো। বলল আপনি কিভাবে যাবেন তাহলে? বললাম সমস্যা নেই।আপনি ছাতা নিয়ে যান।

মেয়েটা বললো ছাতা নিয়ে যেতে চাচ্ছি না বাসায়, আপনি বরং চলুন, কাছাকাছি যেয়ে ছাতাটা ফেরত দিয়ে দিব।

অবাক হলাম এক্টু। ভাবলাম যে এক্টা ছেলের হেল্প নিয়েছে জানলে বাবা মা রাগ করতে পারেন। তাই হয়ত। এগিয়ে দিয়ে আসলাম। পথিমধ্যে জানতে পারলাম ওর নাম আয়েশা। মামা বাড়িতে থাকে ও।বাবা মা নেই। বাসায় যেয়ে রাধতে হবে তাই এই তাড়া। ডেইলি সকালে রেধে ক্লাসে আসে। আজ কি সমস্যা হওয়াতে না রেধেই ক্লাসে এসেছে। বুঝলাম যে অন্যের সংসারে বেশ চাপেই আছে মেয়েটা।


মায়া হলো খুব। এই মায়া জিনিস টা কিন্তু খুব খারাপ। এই মায়ায় পড়েই মাঝে মধ্যে গল্প করতাম আয়েশার সাথে। আমার কলেজ জীবনের প্রথম বন্ধু আয়েশা। বুঝতে পারলাম ওর দুখী চোখের রহস্য।মামা বাড়িতে মামীর অত্যাচারে একদম ভালো নেই ও। খুব রিকোয়েস্ট করে পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্টার পর্যন্ত পড়ার পারমিশন পেয়েছে। এর পর ই বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি যদি পারতাম এই মেয়েটার হাত ধরতাম।তার স্বপ্ন পূরণ করতাম। যত ইচ্ছে পড়তে চায়,পড়াতাম। কিন্তু ওই যে আমি বেশি বুঝি।এই মেয়েকে বউ করার কোন যোগ্যতা আমার এই মুহূর্তে নেই। খামাখা মেয়েটার কস্টের কারণ আর না হই।সরে এলাম ধীরে ধীরে। আর মায়া বাড়ানোর সাহস পেলাম না। এইচ এস সির আগেই শুনলাম ওর বিয়ে হয়ে গেছে। মামা মামীর সংসারে থেকে সেই ষাটের দশকের শেষ দিকে এতিম এক্টা মেয়ের এইচ এস সি পাশের স্বপ্ন তখন বিলাসিতাও বটে।

আমি এক সময় বি এ পাশ করলাম। স্থানীয় এক প্রাইমারি স্কুলে চাকরি নিলাম। বিয়ে করা দরকার কিন্তু মেয়ে পাব কই? আমার জন্য চিন্তা করার কেউই দুনিয়ায় তখন নেই। নানা,নানী,দাদী,বাবা সবাই গত হয়েছেন। এর মাঝেই একদিন আমার স্কুলে দেখা আয়েশার সাথে। ওর ছেলেকে ভর্তি করতে নিয়ে এসেছে ক্লাস ওয়ানে। ওকে দেখে খুব খুশি লাগলো। যাক অবশেষে মেয়েটা এতদিনে সুখে আছে স্বামী সংসার নিয়ে। কিন্তু হায়! জানতে পারলাম হঠাৎ ওর স্বামী মারা গেছে।বছর খানেক হলো। শ্বশুর বাডিতে আর আশ্রয় মিলে নি ওর। মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে ছেলে সহ। আগে ও একা ছিল মামার সংসারে অনাহূত অতিথি, আর এখন ছেলে সহ। সহজেই অনুমেয় কেমন আছে! এর মাঝে ওর ছেলের পড়াশোনা। বুকের কোথায় যেন এক্টা শুন্যতা অনুভব করলাম। ওর ছেলেটার বয়সে আমিও মা হারা ছিলাম। ছেলেটাকে স্কুলে ভর্তি করানো হল। ছেলেটার চেহারাটা খুব মায়াকাড়া। ক্লাসে আসে রেগুলার।খুব মনোযোগী। ছেলেটাকে দেখলে কেন যেন এক্টা পিতৃসুলভ আচরণ চলে আসে। এই বয়সে ছেলেটা এক্টা অনিশ্চিত জীবনের পথে,বাবা নেই,মা আশ্রিতা,কি হবে এই ছেলের ভবিষ্যৎ! এটা ভেবেই যেন আমি জীবনের সবচেয়ে বড় এবং আমার জীবনের একমাত্র সাহসী ডিসিশন টা নিলাম।সন্ধ্যায় হাজির হলাম আয়েশার মামাবাড়ি। মামার কাছে প্রস্তাব দিলাম আয়েশাকে বিয়ে করে ওর আর ওর বাচ্চার দায়িত্ব আমি নিতে চাই।ওর মামা মামীর কাছে এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! এক বাক্যে রাজি তারা। আয়েশা পুরো হতবাক।বাসর রাতেই আয়েশাকে প্রতিজ্ঞা করলাম ও জীবনে যত সুখের হকদার,জান দিয়ে হলেও তা পূরণ করব আমি। আর একটা ওয়াদা করলাম যে এই জীবনে ওর ছেলে আমার নিজের ছেলে হয়ে থাকবে। আমার নিজের সন্তানের চেয়ে ওর ছেলেকে আমি কোনদিন ও কম ভালবাসব না।


আমি আসলে আর কোন দিন ও নিজের সন্তান চাই নাই। বার বার মনে হয়েছে আমার সন্তান হলে মুরগী বা মাছের বড় টুকরো গুলো তো আর এই ছেলে পাবে না। কোন দিন ওকে আমি আমার আর আয়েশার রুম থেকে আলাদা শুতে বলিনি। নতুন বাবা এসে যেন ওর মাকে ওর থেকে আলাদা না করে ফেলে সেই খেয়াল ছিল সব সময়।

ওহ! এতক্ষণে তো আমাদের ছেলে নাম ই বলি নাই। ওর নাম আবির।ওই যে গল্পের শুরুতেই বলেছিলাম ওর আর বউমার কথা। আবির বড় হল এক সময়। পড়তে চলে গেলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।আমি আর আয়েশা রয়ে গেলাম মফস্বলে। আবির পাশ করে চাকরি শুরু করলো। বিয়ে করলো।বউমাকে নিয়ে বেড়াতে আসত বছরে ৩/৪ বার। ছুটি পেলেই। এই সুখী পরিবার টার স্বপ্ন আমার দীর্ঘদিনের। নাতি হলো আমাদের। আয়েশা আর আমি ঢাকা যেয়ে কিছুদিন নাতি পেলে এলাম। নাতি বড় হল। ওদের ব্যস্ততা বাড়লো। আমাদের দেখতে আসার ফ্রিকোয়েন্সী কমে গেলো। বছরে এক্টা ঈদ করতে আসে। এতেই আমরা বুড়ো বুড়ী খুশি। এর মাঝে আয়েশা একদিন ঘুমের মাঝে বিদায় নিলো।আয়েশা আমাকে ফাকি দিয়ে চলে যাবে জীবনেও ভাবি নি। এর পর আমি হয়ে গেলাম ভীষণ একা।ছেলে ঢাকা নিয়ে এলো। হয়ে গেলাম তাদের বোঝা।এটা আমার মানতে খুব কস্ট হচ্ছিল। ওই যে বললাম আমি এক্টু বেশি বুঝি। আমার কোন অযত্ন হয় নাই এই বাসায় কিন্তু প্রায়ই আবির বা বউমা বলে বাবা আপনি যদি চান আরেকটা বিয়ে করতে পারেন। আপনি অনেক একা। আমি বুঝি যে আমার একাকিত্ব, ওদের জন্য অনেক বড় এক্টা টেনশন। আমার খাওয়া দাওয়ার ঝামেলা ছাড়াও আমাকে রেখে কোথাও যেতে ও পারে না দুজন। আমার বিয়ে হলে যেন দুজনেই টেনশন ফ্রি হতে পারে। কিন্তু আমি তো আয়েশার জায়গায় আর কাউকে দেখতে পারব না। কাজেই কি দরকার ওদের এত টেনশনে রেখে। পেপারে খোজ পেলাম এক বৃদ্ধাশ্রমের। থাকা খাওয়া ফ্রি। ভাবলাম ফোনে কথা বলি।ফোন দিলাম। ওরা আমাকে নিতেও রাজি।


কিন্তু আবির আর বউমা খুশি হতে পারছে না। এখানে যদিও সামাজিক দায়িত্ববোধ টাই বেশি। কিন্তু ওই যে আমি বেশি বুঝি। ওদের টেনশন আমি বাড়াতে চাই না। আয়েশার জায়গাও কাউকে দিতে চাই না।শুধু চাই জীবনের শেষ দিন গুলো সুন্দর সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন করে কাটাতে! কাল আমাকে নিতে আসবে আশ্রমের লোকেরা। আবির কে দিয়ে আসতে বলতে পারতাম। কিন্তু ছেলেটাকে কস্ট দিতে চাই নাই। অপশন যখন আছেই। সুখে থাকুক আমার ছেলেটা। যেখানেই থাকি বাবার দোয়া তো থাকবেই ওর সাথে।

সমাপ্ত