পৈতৃক ভিটা ভাগ (Md Rayhan Sarkar) Bangla Family Story, bangla golpo, bangla story, family story bangla, paribarik golpo
Bangla Family Story

গল্পের নামঃ #পৈতৃক_ভিটা_ভাগ
Writer :Md Rayhan Sarkar
বংশের উপাধি সরকার
পারিবারিক পরিচয়ঃ

মৃত আলহাজ্ব কিন উদ্দিন সরকার,
সন্তানঃ( ৭সাত) ছেলে, (৩ তিন) মেয়ে।

সকলেরই পারিবারিকভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।
বড় ছেলেঃআব্দুল মিদহা সরকার,
সন্তানঃদুই ছেলে,দুই মেয়ে।
দ্বিতীয়ঃআব্দুল সারত্ত সরকার,দুই ছেলে, এক মেয়ে।
তৃতীয়ঃআব্দুল জরব্বা সরকার,৪ছেলে, ৩মেয়ে।
চতুর্থঃআব্দুল দমজি সরকার।
পঞ্চমঃআব্দুল কলেখ সরকার,২ছেলে।
ষষ্ঠঃআব্দুল মকলে সরকার,২মেয়ে।
সপ্তমঃআব্দুল তেনবা সরকার,১ছেলে।
গল্পের শুরু এখান থেকেই জীবিকার তাগিদে হাজী সাহেবের ৭সাত ছেলে সন্তানের মধ্যে ৪ছেলে'কে শহরে অবস্থান ও স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে হয়
(২য়,৪র্থ,৫ম,৬ষ্ঠ সন্তান) এবং উনারা ৪জনেই প্রতিষ্ঠিত উনাদের ছেলে-মেয়ে সহ।আর বাকি ৩সন্তান গ্রামেই থেকে যায় গ্রামীণ পরিবেশে উনাদের সন্তান নিয়ে,তাদের বলা হয় গ্রামিয়া ভূত।

পারিবারিক ভাবে একই হলেও এখানে ৭ভাইয়ের মধ্যে সামাজিক ভাবে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় যে,
গ্রাম বনাম শহর, আর প্রতিষ্ঠিত বনাম অপ্রতিষ্ঠিত।কিন্তু নিজ নিজ অবস্থান ভেদে সকলেই হ্যাপি।

কেউ কারো কাছে প্রত্যাশা করে না।কারো না থাকলে অন্যের পতিপত্তি'র উপর লোভ করতে হবে এমনটা নয়,জীবিকার তাগিদে কর্মের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়।আর যে যতই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন পৈতৃক ভিটা সকলের প্রয়োজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তা করে।যেন বিপদের সময় তা কাজে লাগে,কিন্তু হাজী সাহেব জীবিত অবস্থায় ৭ছেলের মধ্যে আবাদি জমি ভাগাভাগি করে দিলেও দুঃখবশত পৈতৃক ভিটা ভাগাভাগি করে দিতে পারেন নাই।

কিন্তু জানা গেছে মৌখিক ভাবে ওসিয়ত করে গেছেন।তাই উনার অবর্তমানে কয়েক বছর পর ভাইদের ও ভাতিজাদের মধ্যে ভিটা নিয়ে মৌণ দ্বন্দ্বের লক্ষ করা যায়। আর এই দ্বন্দ্ব নিরশনের জন্য তৃতীয়
পক্ষ হিসেবে হাজী সাহেবের মেয়ের ছেলেদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়।আর তাই উনাদের ব্যস্ততার মাঝেও মামাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে মৌন দ্বন্দ্ব নিরসনের কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকে কয়েক বছর, এর মধ্যে সবাই সবার কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত।আর গ্রামে যারা বসবাস করে উনাদের বংশ বিস্তারের কারনে ও আর্থিক ভাবে অসচ্ছলতার কারনে বস্তির পরিবার গুলোর মত বসবাস করে আসছে দীর্ঘদিন। তাই হাজী সাহেবের গ্রামে ৩সন্তান পরিবার নিয়ে কষ্টেই থাকে।আর এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে শহরে থাকা ৪সন্তান ও তাদের ছেলে-মেয়ে।তবে দেখেও বা কি করার উনাদের কেউ কাউকে দেবে না এটা সত্যি,কারন যার যত থাকে তার ততো ঝামেলা থাকে,তাই একে অপরের যন্ত্রণা কেউ সহজে উপলব্ধি করতে পারে না।

পারিবারিক ভাবে হাজী সাহেবের চতুর্থ সন্তান দমজি সরকার গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ও মা-বাবার ওসিয়ত অনুযায়ী কাজ শুরু করেন,এবং গ্রামে বসবাসকারী ভাইদের অসহায়ত্বের পাশে থেকে অনেক অবদান রেখেন যা তিনি আখিরাতে পুরস্কৃত হবেন কর্মের জন্য, এবং সকলেই উনার অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।তাই যেকোন ব্যাপারে দমজি সরকারের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখে সকলেই গ্রামের।যে উনি বাড়ি ভিটা সুষ্ঠু ভাবে বন্টন করতে সক্ষম হবেন।

কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিষয় ও বয়সের ভারে তা উনি করতে অনেক সময় লাগিয়ে ফেলেন।গ্রামের মানুষ হলেও সবার ইচ্ছা হয় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে।জীবনে প্রত্যেক শ্রেণি পেশার মানুষের ইচ্ছা ও স্বপ্ন থাকে জীবনের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে বাড়ি।আর এভাবেই যুগে যুগে সামাজিকতা চলছে।
গ্রামীণ পরিবেশে হাজী সাহেবের সপ্তম ছেলে তেনবা সরকারের আলাদা বাড়ির প্রয়োজন, এই প্রয়োজনের তাগিদে সকলের সিদ্ধান্ত ও কারো দিকে না তাকায় থেকে উনার সন্তানের পরামর্শ মতে বাড়ির কাজ শুরু করা হয় অনেক প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে যা আজ বন্দি নিরুসন হয় নি জানা মতে,যেহেতু সপ্তম ছেলে অধিকার বলে উনার প্রয়োজন মত বাড়ির এরিয়া নির্ধারণ করে নিয়েছে,

সেহেতু প্রশ্ন থাকে আর বাকি হাজী সাহেবের বাড়ি ভিটার এরিয়া কথায়,কিন্তু হাজী সাহেবের রেখে যাও ভিটার মধ্যে তেনবা সরকার (৩.৬৬) শতাংশে বাড়ির কাজ শুরু করে যেহেতু উনার এক ছেলে তাই উনি ভেবে নিয়েছেন এতোটুকুই যথেষ্ট।

কিন্তু হাজী সাহেবের মূল বাড়ি ভিটা ১১শতাংশ তাই হাজী সাহেবের অসিয়ত অনুযায়ী গ্রামে বসবাসকারী তিন ভাইয়ের মধ্যে তা বন্টন হবে এবং বাকি শহরে থাকা ৪সন্তানের জন্য আলাদা জায়গা অসিয়ত করে যান।আর বাপের ভিটা সবাই নিবে এটা ১০০% সত্য।

এটা কেউ অস্বীকার করে না আর করলেও লাভজনক হবে না, দ্বন্দ্ব চলমান থাকবে তা হবে অন্যকে ঠোকানো। তেনবা সরকার বাড়ির কাজ শুরু করলে আবার নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।হাজী সাহেবের মূল ভিটা গ্রামে বসবাসকারী তিন সন্তানের মধ্যে তেনবা সরকার মূল ভিটায় কাজ শুরু করে আর বাকি হাজী সাহেবের দুই সন্তান মূল ভিটা না নিয়ে অন্য জায়গায় ভিটা বাড়ির ভাগ নেয় নিজে নিজেই।

সেই সুবাদে মূল ভিটার তিন অংশের মধ্যে দুই অংশ অতিরিক্ত থেকে যায় শহরে থাকা সন্তানদের জন্য,আর অন্য হাজী সাহেবের দেখায় দেওয়া জায়গায় থাকে দুই সন্তানের জন্য,এভাবেই মিলে যাওয়ার কথা হাজী সাহেবের ৭সন্তানের ভিটার ভাগাভাগি। কিন্তু তা কেউ গ্রামের সন্তানেরা মেনে নিলেও শহরে থাকা সন্তানেরা মানতে রাজি নন।এভাবে চলছে বিতর্কিত,কোন সমাধান হচ্ছে না।

কিন্তু যুগে যুগে হয়ে আসা গ্রামীণ পরিবেশকে নষ্ট করে শহরের মানুষ বাড়ি ভিটার ভাগ চায়।
যেমনঃগরুর গোয়াল ঘর সরাতে হবে,ধান রাখা গোলা ঘড় সরাতে হবে,পারিবারিক ভাবে যে জানাজা নামাজ ও ক্ষেতের ফসল কেটে মাড়াইয়ের জন্য যে উঠান তা নষ্ট করে দিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি শর্ত দেওয়া হয়।

কিন্তু এগুলো বাদেও বাড়ি ভিটার জন্য রেখে যাওয়া জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে শহরের মানুষ গুলির জন্য।
গ্রামের পরিবেশে থাকতে হলে গ্রামের মানুষের জন্য জীবনে আবাদি ফসল, পশু-পাখি,হাস-মুরগি,গরু-ছাগল অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু শহরের সন্তানদের এমন শর্তে গ্রামের হাজী সাহেবের ছেলেরা হতাশ।

কারন এগুলো স্থানান্তরিত করার মত অবশিষ্ট কোন জায়গা নেই।তাই ভাইয়ে ও ভাতিজাদের মধ্যে মৌন দ্বন্দ্ব চলমান।আর জানা যায় এসবের কারনে পারিবারিক ভাবে মীমাংসায় আসতে পারছেনা উভয় পক্ষ,
গ্রামীয়া বনাম শহরীয়া।কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমরা উভয় পক্ষের ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছুতে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়।যাতে করে পারিবারিক কলহ দিন দিন বাড়তেই থাকবে।গ্রামের ভাইয়া বলছে আমাদের বেশি অংশ চাই না,বসবাসের জন্য গ্রামীণ পরিবেশ চাই।তাই গ্রামের মানুষের অগ্রাধিকার দিন। যেহেতু শহরের ভাইয়া অবসর সময়ে বেড়াতে আসবে সেহেতু সুন্দর একটি বাড়ি হলেও যথেষ্ট। হঠাৎ এসে আরাম আয়েশ করতে পারবে।আর গ্রামীয়া বলে, অসচ্ছল বলে কোন দিন কাউকে ছোট ভাবতে নেই, প্রত্যেকের কথার গুরুত্ব দেওয়া উচিত।কারন এতে করে সমাধান আসতে পারে।

বিঃদ্রঃ আর এই সব কথা বলতে গিয়ে হাজী সাহেবের গ্রামীয়া নাতিদের দোষরোপ করা হয় বিভিন্ন ভাবে,বিভিন্ন ভাবে অকথ্য ভাবে গালিগালাজ করা হয়,ছোট করে দেখা হয়।কিন্তু গ্রামের ছেলেরা গ্রামের মতই বসবাস করতে চায়, শহরের পরিবেশ চায় না।
কারন উনারা গ্রামীয়া।
যাদের কিছু নেই তারা কারো কাছে আশা প্রত্যাশা করে না,যা আছে তাই নিয়ে সুখি হতে চায়।পরিশেষে জানা যায় ৩.৬৬ শতাংশ যদি তেনবা সরকারের হয় তাহলে ৬শতাংশ করে শহরের মানুষগুলোর কেন হবে না।আর সখের বশে যারা কিছু করতে চায় যা পাওয়া যায় তাই লক্ষী।
তাই পরামর্শ গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য এবং পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখতে সল্প জায়গার মধ্যেই মনের মত বাড়ি করি।নিজেদের স্বপ্ন গড়ি।আর দূর থেকে কাউকে ভুল বুঝা অভ্যাস বাদ দেই,সন্দেহ করা বাদ দেই।কখনো কারো সম্পদ কেউ নিতে পারে না,আর যদিও পারে ক্ষনিকের জন্য।সত্যের জয় অনিবার্য।