ভুলের মাশুল
পর্ব-১
লিখা-আয়েশা
রুহির অন্তরঙ্গ কয়েক মিনিটের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।ওর বান্ধবী সায়মা রুহিকে জানাল।রুহি কোনোভাবে সায়মাকে বুঝালো আরে এটা আমি না।
রুহি কিসের মধ্য দিয়ে বাড়িতে আসল তা আর বলার ভাষা রাখে না।বাসায় এসে দরজা লাগিয়ে দিল।
ফোনে একটা মেসেজ আসল।মেসেজে লিখা
"" আর আধা ঘণ্টা সময়ের মধ্যে জিয়া গেস্ট হাউসে না পৌছলে পুরো ভিডিও টাই আপলোড দেয়া হবে""
রুহি মনে মনে ভাবল না আর সহ্য করা যাচ্ছে না।এ জীবনের কোন মূল্য নেই।যাকে এত বিশ্বাস আর ভালোবাসতো সেই এত বড় প্রতারক হয়ে ওর সামনে এল।
এ জীবন রেখে আর কি লাভ
বাবা মা এখনও জানে না,
জানলে তিনটা ফাঁসি হবে এ বাসায়।সব জানাজানি হওয়ার আগেই আমি মরে যাই এটাই ভালো।রুহি আলমারি খুলে ওর মায়ের একটা শাড়ি নিল।শাড়িটা ফ্যানের সাথে বাধল।একটা চেয়ারে দাড়ালো,গলায় পেচাল।ঠিক তখনই
ওর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল যে কত আদর স্নেহ মমতা দিয়ে ওর বাবা মা ওকে বড় করেছে।সামান্য কান ফোঁড়াবো আমার থেকে বাবা মা দুজনই বেশিটেনশনে পড়ে গেল।কি যে ভালোবাসে আমায় ওনারা দুজন
আর রুহি এর প্রতিদানে কি দিল বাবা মা কে।বদনাম আর শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো,
আত্মহত্যা কারী কখনই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।রুহি ওর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিবেন অবশ্যই ,তবে তওবা করতে হবে।
এদিকে রুহির মা অনেক সময় ধরে দরজা লাগানো তাই চিন্তায় শেষ।পরে এসে দরজা ধাক্কা দেয়া শুরু করলো।
রুহি ওসব কথা ভাবতে ভাবতে ওর মা অনেক বার ডেকে ফেলেছে।ওদের ড্রাইভার এসে পড়েছে নিচ থেকে চিৎকার শুনে।রুহি শাড়ি না সরিয়েই দরজা খুলে ফেলল।ওর মা ভিতরে এসে আরো চিৎকার করে কান্না শুরু করলো।কি!মা কেন তুই এসব করতে গেলি, কি হয়েছে মা পরীক্ষা খারাপ হয়েছে।তোর বাবাকে ফোন করি।রুহি বাধা দিল।
__আপনি প্লিজ আসুন
__জী ম্যাডাম
রুহি ড্রাইভার কে বিদায় করে ওর মাকে বললো
__ মা করতে গিয়েছিলাম করি নি,আর করবো ও না।
__আমাকে ছুঁয়ে কথা দে কখনো আর এসব করবি না
__না মা আর কোনদিন এ পথে পা বাড়াব না।আল্লাহ্ যেদিন মৃত্যু দিবে সেদিন মরবো।বাবা আসুক তারপর বলবো।তুমি কথা দাও মা আমাকে ক্ষমা করে দিবে।আর বাবাকে বুঝাবে
__কি করেছিস তুই বল
__বললাম তো বাবা আসলে বলবো
রুহির বাবা বাসায় আসলো খুব রাগী রাগী হয়ে।রুহি খুব ভয় পেয়ে গেল।বাবা হয়তো জেনে গেছে।মেরেই ফেলবে হয়তো আজকে।যাক বাবার হাতে মরলেও ভালো পাপের শাস্তি হয়ে যাবে একটু হলেও।
রুহির মা বললো শান্ত হও জানো মেয়ে আজ কি করতে নিছিল।শাড়ি দিয়ে গলায় ফাঁসি দিতে গিয়েছিল।আল্লাহ্ বাঁচাইছে আমি সময় মতো পৌছে গেছি।একথা শুনে রুহির বাবার রাগ কমে গেল।মেয়েকে হারানোর ব্যথা উনিও সহ্য করতে পারবেন না।রুহি ওনার পায়ে এসে পড়লো,বললো-
__বাবা আমি অনেক বড় ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও।একজনকে বিশ্বাস করে ভুল পথে পা দিয়েছি
__হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না আমি সব জানি।
ঐ লিংক থেকে ছেলের আইডির নাম বের করে সাইবার ক্রাইমের ট্রাইব্যুনালে দিয়ে আসছি।তবে তুই যে এ পথে পা দিবি আমার জানা ছিল না।আমি তোকে অনেক বিশ্বাস করতাম।যা চেয়েছিস সব সময়ে আগে আগে হাজির করেছি।আর সেই তুই এমন ভাবে কষ্ট দিলি।
__থাক বেশি কিছু বলো না,নইলে আবার কিছু করে বসবে
__না মা কিছু করবো না,দরকার হয় তোমাদের হাতে মরবো কারন আমি ভুল করেছি আমার বাবা মার কাছে আর আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে,নিজে নিজে আত্মহত্যা করে আরো পাপী আমি হবো না।তোমরা এখন যে শাস্তি দিবে তাই আমি মাথা পেতে নিবো।
__তুই এখন আমার সামনে থেকে চলে যাহ্,আমি এখন তোর মুখ দেখতে চাই না।
রুহি কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেল।রুমে এসে দেখল অনেক গুলো মেসেজ
"""তোর এত বড় সাহস আমাকে পুলিশের ভয় দেখাস তোর বাবাকে দিয়ে,এখন অন্য ফেক আইডি থেকে আপলোড দিবো তখন কি করবি"""
রুহি রিপ্লাই দিল
""তোর যা খুশি যেখানে খুশি আপলোড দে
আমার সমস্যা নেই যা হওয়ার হয়ে গেছে
আমার জীবন এমনিতেই নষ্ট করে দিয়েছিস
আর কি ভয় দেখাবি,
তোকে বিশ্বাস করে যে ভুল করেছি
তার শাস্তি তো আমাকে পেতেই হবে""
মেসেজ টা সেন্ড করেই রুহি ফেসবুক আইডি ডিএকটিভ করে দিল।মেসেন্জার
ডিলিট করে দিল।আবার এখন ফোন করেছে।রুহি ফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলল।অনেক সখের আইফোন ছিল।বাবা কিনে দিয়েছিল এই তো গত বছর।ফোনটা কিনে বাসায় আনার পর
রুহি ওর আইডিতে লগ ইন করার পর দেখল একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।
আইডির নাম দুষ্ট ছেলে রোহান
রুহি রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করল।শুরু হয়ে গেল মেসেন্জারে চেটিং।ফোনেও কথা হতো মাঝে মাঝে।
প্রায় ছয় মাস কথা বলার পর ওরা সিদ্ধান্ত নিল দেখা করার।এতদিন ওরা বন্ধু হিসেবেই কথা বলছিল।রোহান খুব জোরাজুরিতে রুহি রাজি হলো।রুহি বললো ঠিক আছে কাল বিকেলে একটা পার্কে আসব।বিকেলে রুহি একটা জিন্স আর একটা টপস পড়ে চলে গেল।
রোহান ও আসল,রোহান রুহিকে দেখে পাগল হয়ে গেল।একটা মেয়ে এত সুন্দর হয় কিভাবে।রোহান ভাবছে ও হয়তো রুহির প্রেমে পড়ে গেছে।রুহির ও রোহানকে দেখে ভালো লাগল।কিছুক্ষণ কথা বলার পরে ওরা যে যার মতো বাসায় চলে আসল।
সেদিন রাতে চেটিং করছে
রোহান রুহিকে প্রপোজ করলো খুব ইনিয়ে বিনিয়ে।রুহি ব্যাপার টা বুঝেও না বোঝার ভান করলো।দুই তিন দিন ঝুলিয়ে রাখল।
কয়েকদিন পর রুহি রোহানের ভালোবাসায় সারা দিল।ওদের প্রণয় শুরু হলো।রুহির দিনগুলো খুব ভালো যাচ্ছিল।ওর মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব সুখ ওর কাছে এসে ধরা দিয়েছে।অর্ধেক রাত জেগে ওরা কথা বলতো।রোহানের কথায় ও কখনো কোন খারাপ দিক খুঁজে পায় নি।একটা সৎ প্রেমিকের মতো আচরণ সব সময় ওর মাঝে ছিল।আসলে মানুষের ভিতরের মুখোস ধরা যায় না।
একদিন ওরা ঠিক করলো দেখা করবে।রুহি সুন্দর করে সেজেগুজে বের হলো।কিছুদূর যাওয়ার পর পরই শুরু হলো বৃষ্টি।রোহান ও এসে পড়ল।রোহানের বললো চলো কোন এক জায়গায় গিয়ে বসি।রুহি বললো না বাসায় চলে যাই।কতদিন পর দেখা হলো আমাদের এত জলদি ছাড়ছি না।রোহান রুহিকে একটা বাড়িতে নিয়ে গেল।সেই বাড়িতে গিয়ে রুহি কাউকে দেখল না।রোহান জানাল এটা ওর আপুর বাসা ওরা শপিং করতে বের হয়েছে।
রোহান একটা তোয়ালে দিল শরীরটা একটু মোছার জন্য।রুহি চুল হাত এগুলা মুছতে লাগল।হঠাৎ রোহান পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।রুহি বললো একি করছো ছাড়ো
__কেন ছাড়ব আমার কি তোমাকে আদর করার অধিকার নেই
__আছে তবে বিয়ের পর,এখন এসব ঠিক নয়
__তুমি আমি রাজি থাকলে সব ঠিক
আসলে মুখোশধারী শয়তানের মুখে মিষ্টি মিষ্টি কথা যা শুনে রুহির মন গলে গেল।
রুহি আর না করতে পারেনি।রোহানের স্পর্শ ওকে পাগলের মতো করে দিল।দুজন দুজনের মধ্যে ডুবে যেতে লাগল।রুহির পরম বিশ্বাসের হাত ঠিক তখন থেকেই বেইমানি করতে লাগল।অনেক বিশ্বাস আর ভালোবাসায় রুহি রোহানের ডাকে সাড়া দিল।দুজনেই সমান অপরাধী।কিন্তু এই ভুলের মাশুল ওকে সারা জীবন ধরে দিয়ে যেতে হবে।
রুহি এতটাই মগ্ন হয়ে গেল রোহানের প্রতি ওখানে যে ওদের দুজনের উপস্থিতি ছাড়া ও আরেকটা চোখের দৃষ্টি যে ওর উপর তা খেয়াল করে নি।আরেক জোড়া চোখ রুহির সর্বশরীর খুব আকাঙ্খা নিয়ে দেখছে এটা রুহি কল্পনাও করতে পারে নি