বাংলা গল্প মায়াবতী নতুন ভালোবাসার গল্প - New Love Story, Valobashar Golpo, Bangla Love Story

বাংলা গল্প মায়াবতী, নতুন ভালোবাসার গল্প, New Love Story, Valobashar Golpo, Bangla Love Story, রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প, ভালোবাসার গল্প, রোমান্টিক গল্প, premer golpo, romantic love story, bangla love story
নতুন ভালোবাসার গল্প - New Love Story

গল্পঃ মায়াবতী
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৪


চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, চুলগুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে। শ্যামলা বর্ণের ছেলেটির গায়ের রং কালো হয়ে গেছে রোদে পুড়ে পুড়ে। মুখে এখন আর হাসি দেখা যায় না। চেহরায় সবসময় টেনসনের ছাপ। অনলাইন খুবই ফেমাস থাকা নিশুকে আজ কেউ চিনতেই পারবে না।

নিশু দিনরাত পরিশ্রম করছে। তবে এতো পরিশ্রম করার পরও সংসারের জন্য বেশি টাকা আয় করতে পারছে না। তার বাবার ঔষধ, সংসারের খরচ সবকিছু এই কম আয়ে হয়ে উঠছে না। একটা ভালো বেতনের চাকরির আশায় আছে নিশু। কিন্তু এই বেকার সমাজে ভালো চাকরির খুবই অভাব। ঘোষ দেওয়া ছাড়া কোনো ভালো বেতনের চাকরি খুব কমই পাওয়া যায়। আর নিশুর পরিবার এখন আর্থিক ভাবে এতটাই অস্বচ্ছল হয়ে পড়েছে যে কোন চাকরির জন্য অনেক টাকা ঘোষ দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না।

ইদানিং মিশি খেয়াল করছে নিশু তাকে এড়িয়ে চলে। খুব কম কথা বলে, ঠিকমতো অনলাইনে আসে না। মিশি কিছু জিজ্ঞেসা করলে কথাগুলো এড়িয়ে দেয় কোনভাবে নিশু।
নিশু এখন মিশির কাছ থেকে দূরে সরে আসতে চায়। তার সাথে থাকলে হয়ত মিশির জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। নিশু মিশিকে এখনো কিছু বলেনি। মিশিকে সে জানতে চায় না তার জীবনে কি কি হচ্ছে। কারণ সে জানে সবকিছু মিশিকে জানালে মিশির জীবন থেকে সরে আসা যাবে না। সে নিরবে মিশির জীবন থেকে চলে আসতে চায়।

মিশির বাসায় এখন মিশির জন্য বিয়ের সম্বন্ধ আসা শুরু হয়েছে। মিশি কোন না কোনো কারণ দেখিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে। মিশি নিশুকে তার বাসায় বিয়ের সমন্ধ পাঠানো কথা বলায় নিশু না করে দেয়। নিশুর পক্ষে এখন মিশিকে বিয়ে সম্ভব না। মিশি কারণ জানতে চাওয়াই নিশু বলে
- তোমাকে আমার এখন আর ভালো লাগে না।
- মানে, কি বলছেন এসব?
- হ্যা, এটাই সত্য। তোমাকে ভালো লাগে না আর। তুমি একটা আনস্মার্ট মেয়ে। তোমার মতো মেয়ে আমার বিয়ে করবো কখনোই না।
- কি বলছেন এসব, আমাদের রিলেশনের ২ বছর হতে চললো। এতোদিন তো আপনি কখনো এসব বলেন নি আজ হঠাৎ এসব?
- এখন বলছি তো। আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কি পেয়েছি আমি? অন্য সব জিএফ বিএফদের দেখো তাদের মধ্যে বিয়ের আগেই দৈহিক সম্পর্ক হয়ে যায়। আর তুমি তো তোমাকে ছোয়ার অনুমতিটাই আমাকে দাও নি কখনো। তোমার মতো মেয়েকে আমি বিয়ে করবো, তুমি ভাবলে কি করে?
- ছি! আপনার মনমানসিকতা এতোটা নোংরা তা আগে জানা ছিলো না। ওই দিন যখন বলেছিলেন যে তোমার অনুমতি ছাড়া আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না, তখন নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন এসব কি বলছেন? সত্যিই কি এটা আপনি?
- হ্যা, এটা আমিই।
- তো কেনো এসেছিলেন আমার কাছে? আমাকে কেনো এতো স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন?
- তুমি এতো দিনে আমাকে একটুও চিনতে পারলে না? আমি হচ্ছি প্লেবয়। অনেক গুলো মেয়ের সাথে প্রেম করেছি। টাইম পাস করায় আমার কাজ৷ তোমার সাথেও আমি এতোদিন টাইম পাস ই করেছিলাম। সবকিছুই অভিনয় ছিলো বুঝলে। এখন আর তোমাকে ভালো লাগে না আমার। আমি অন্য কাউকে পেয়েছি এখন। আমাকে ভুলে যাও।
- ভুলে যাও মানে এতো সহজ নাকি সবকিছু। আপনি বললেন আর হয়ে গেল। আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
- তোমার সাথে আমার এখন দেখা করার কোনো মানে নেয়। আমি এখন অনেক ব্যস্ত।
- আমি জানি এসব কিছু আপনি কোনো কারণে বলছেন নাহলে আপনি এসব বলার কথা কখনো চিন্তাও করতেন না। প্লিজ বলেন কেন এমন বলছেন?
- তোমার যা ভাবার ভাবো। আমি ব্রেকআপ চায়। আমাদের মধ্যে এখন থেকে আর কোনো সম্পর্কে নেই।
- না প্লিজ এমন করে বলবেন না। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। প্লিজ এভাবে আমাকে কষ্ট দিবেন না। (কান্না করতে করতে)
- তোমাকে এসব ন্যাকামো একদম ভালো লাগে না আমার
বলেই ফোনটা কেটে দেয় নিশু। নিজের বুকে পাথর রেখে এতোক্ষণ এই অভিনয়টা করতে হলো তার। খুব কষ্ট হচ্ছিল তার এই কথাগুলো বলতে। মনে হচ্ছিল তার হৃদয়টাকে বার বার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। মিশির কান্না নিশুর সহ্য না হওয়ায় ফোনটা রেখে দেয়। কখনোও ভাবেনি তাকে এভাবে কষ্ট দিতে হবে তার মায়াবতীকে।কিন্তু মিশির সুখের জন্য নিশু সব করতে পারে, তা মিশির চোখে নিজেকে ঘৃণাপাত্র করে হলেও।সে চায় মিশি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখে থাকুক।

নিশুর কথাগুলো কুরে কুরে খাচ্ছে মিশিকে। এতো সহজে কিভাবে নিশু এইসব বলতে পারলো? ভালোবাসে এতো সহজেই কি একজনকে ভোলা যায়? মিশির একবার হলেও নিশুর সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু মিশি আর নিশুর মাঝে দূরত্ব এতোটাই যে মিশি চাইলেই নিশুর সাথে দেখা করতে পারবে না। সে বার বার নিশুকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু নিশু ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে। তাই মিশি নিশুর বন্ধু অয়নকে ফোন দেয়।

Next Part